দুর্ঘটনায় নিহত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ছাত্র মীর মোজাম্মেল হোসেন নাঈমের জানাজায় অংশ নেন হাজারো মানুষ। আজ সকাল দশটায় ফেনীর ফতেহপুর ঈদগাহ ময়দানে
দুর্ঘটনায় নিহত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ছাত্র মীর মোজাম্মেল হোসেন নাঈমের জানাজায় অংশ নেন হাজারো মানুষ। আজ সকাল দশটায় ফেনীর ফতেহপুর ঈদগাহ ময়দানে

ছেলে আসবে বলে অপেক্ষায় ছিলেন মা, বাড়ি ফিরল নিথর দেহ

বনভোজনে যাওয়ার আগের দিন রাতে মা নাহিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়েছিল মীর মোজাম্মেল হোসেন নাঈমের। তখন মাকে বলেছিলেন, পিকনিক (বনভোজন) শেষেই তিনি বাড়ি আসবেন। ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ার বাড়িতে গতকাল শনিবারও ছেলের অপেক্ষায় ছিলেন মা। আজ রোববার নাঈমের আসার কথা ছিল। কথামতো ফিরেছেন নাঈম, তবে নিথর দেহে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) শিক্ষার্থীদের বহনকারী বনভোজনের বাস জেলার উদয়খালী এলাকায় বিদ্যুতায়িত হয়। গন্তব্য থেকে আধা কিলোমিটার দূরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের দরজার দিকে থাকা তিনজন বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুতর আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনায় নিহত তিন শিক্ষার্থীর একজন মীর মোজাম্মেল নাঈম। নিহত নাঈম ইইউটির মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আজ ভোরে নাঈমের লাশ ফেনী সদর উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। সকাল ১০টায় ফতেহপুর ঈদগাহ ময়দানে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় নাঈমের সহপাঠী, আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসীসহ কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। এরপর বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

ফতেহপুর গ্রামে ঈদগাহে আজ সকালে ছিল শোকার্ত মানুষের ঢল। স্বজন ও প্রতিবেশীরা নাঈমের বাবাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। জবাবে কিছুই বলতে পারছিলেন না তাঁর কলেজশিক্ষক বাবা মীর মোতাহের হোসেন। মোতাহেরের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নাঈম ছিলেন দ্বিতীয়। বড় ভাই বাক্‌প্রতিবন্ধী। তাই নাঈমকে ঘিরেই ছিল পরিবারের অনেক আশা। তবে চোখের সামনে এভাবে সব শেষ হয়ে যাবে, তা মানতে পারছেন না এই শিক্ষক।

নিহত মীর মোজাম্মেল হোসেন নাঈম

ছেলের জানাজা শেষে কথা বলতে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মোতাহের হোসেন। জানালেন, ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে তার মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। অনেকটাই নির্বাক হয়ে গেছেন তিনি।

জানাজায় আসা লোকজন জানালেন, নাঈম ছিলেন হাসিখুশি। সবার সঙ্গে মিশতেন। গ্রামে গেলে আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে হেসে কথা বলতেন। খোঁজ নিতেন।

স্বজনেরা জানালেন, মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন নাঈম। ফেনী শহরের হলি ফ্যামিলি ক্রিসেন্ট স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ফেনী পাইলট হাইস্কুলে ভর্তি হন তিনি। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এরপর গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রকৌশলী হবেন, এমন ইচ্ছা ছিল তাঁর। কিন্তু দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।