প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে কক্সবাজার শহরের কলাতলী সৈকত সড়কে শতাধিক তোরণ বানিয়েছেন নেতা–কর্মীরা। মঙ্গলবার দুপুরে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে কক্সবাজার শহরের কলাতলী সৈকত সড়কে শতাধিক তোরণ বানিয়েছেন নেতা–কর্মীরা। মঙ্গলবার দুপুরে

কক্সবাজারে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক নৌশক্তি মহড়া, মেরিন ড্রাইভে যান চলাচল বন্ধ

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ইনানী সমুদ্রসৈকতে কাল থেকে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ (আইএফআর)-২০২২ শুরু হচ্ছে। আগামীকাল বুধবার সকালে ইনানীতে উপস্থিত থেকে মহড়ার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য কাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। নৌশক্তি প্রদর্শন মহড়ায় অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারতসহ বিশ্বের ২৮টি দেশ।

মহড়া অনুষ্ঠান শেষে বেলা আড়াইটার দিকে সৈকতের লাবণী পয়েন্টসংলগ্ন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের দলীয় জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সফর ঘিরে শহরে সাজ সাজ রব। ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে সড়ক-উপসড়ক। শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে শহরের কলাতলী সৈকতের পাঁচ কিলোমিটারে বানানো হয়েছে শতাধিক তোরণ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো সফরসূচি অনুযায়ী ৭ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে ইনানী সৈকতে পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে নৌবাহিনীর অনুষ্ঠান শেষে শহরের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দলীয় সভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফিরবেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার সকালে মেরিন ড্রাইভ ঘুরে দেখা যায়, সড়ক অনেকটা ফাঁকা। ৮৪ কিলোমিটারের এই মেরিন ড্রাইভে দিনে কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। বেশির ভাগ গাড়ি উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টির আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সেবায় কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের। এ ছাড়া শরণার্থী সেবায় নিয়োজিত আরও কয়েক শ যানবাহন ও মালামাল পরিবহনের ট্রাক কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক দিয়ে আশ্রয়শিবিরে যাতায়াত করে।

আশ্রয়শিবিরে কাজ করা তিনটি সংস্থার কর্মকর্তারা বলেন, ইনানী সৈকতে নৌবাহিনীর আন্তর্জাতিক মহড়ায় যোগ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য মেরিন ড্রাইভ সড়ক নিরাপদ রাখা জরুরি। তাই আজ থেকে অধিকাংশ সংস্থা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেরিন ড্রাইভ সড়ক পরিহারের নির্দেশনা দিয়েছে। কেউ কেউ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাল বিকেল পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরে যেতে নিরুৎসাহিত করেছে। এ জন্য আজ থেকে মেরিন ড্রাইভ ফাঁকা।

যান চলাচল সীমিত হওয়ায় আশ্রয়শিবিরের সেবা কার্যক্রমে কোনো সমস্যা হচ্ছে না উল্লেখ করে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, মেরিন ড্রাইভের মধ্যভাগে ইনানী সৈকতে আন্তর্জাতিক নৌশক্তি প্রদর্শন মহড়ায় উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। নিরাপত্তার স্বার্থে কাল মেরিন ড্রাইভে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখা হচ্ছে। এ জন্য দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থার কর্মচারীদের ওই সড়কে চলাচলে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ব্যবহার করে তাঁরা আশ্রয়শিবিরে যাতায়াত করতে পারেন। ঘোষণা দিয়ে আশ্রয়শিবিরের সেবা কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক নৌশক্তি মহড়ার কারণে কাল কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। ইতিমধ্যে সড়কে যান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সড়কের পাটোয়ারটেক এলাকায়

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কাল বিকেলে শেখ কামাল স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা থেকে হাজারো কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের আগমন ঘটবে। মেরিন ড্রাইভে প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি থাকায় লোকজনকে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়ক দিয়ে জনসভায় আসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কে তীব্র যানজট হতে পারে।

নৌবাহিনীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক নৌশক্তি প্রদর্শন মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মিসর, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ওমান, ফিলিস্তিন, সুদান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মোট ২৮টি দেশ অংশ নিচ্ছে।

‘সীমানা ছাড়িয়ে বন্ধুত্ব’ এ প্রতিপাদ্যে মহড়ায় ৪৩টি যুদ্ধজাহাজ, ২টি বিএন এমপিএ ও ৪টি বিএন হেলিকপ্টার থাকছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে মহড়ার উদ্বোধন করবেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রথমবারের মতো কক্সবাজার সৈকতে আন্তর্জাতিক নৌশক্তি মহড়ার আয়োজন করছে।