দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ১৯ জন বর্তমান ও সাবেক নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। তাঁদের মধ্যে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান ওরফে রূপণও আছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এসব চিঠি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহিদুর রহমান আজ শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির পাঠানো এসব চিঠি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। চিঠিতে কেন তাঁরা দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাহিদুর রহমান বলেন, বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ কারণে নির্বাচনের যেকোনো কার্যক্রম থেকে প্রতিটি ওয়ার্ড বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব স্তরের নেতাদের বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। একই সঙ্গে ভোটারদের ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার বিএনপির অন্তত ২১ জন বর্তমান ও সাবেক নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁদের মধ্যে কামরুল আহসান ওরফে রূপণ মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। এ ছাড়া নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির তিনজন যুগ্ম আহ্বায়ক ও চারজন সদস্য রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ব্যক্তিদের মধ্যে। বাকিরা ওয়ার্ড বিএনপি এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক নেতা।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও এর বাইরে আরও ২ জন রয়েছেন। তাঁরা হলেন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের (১৬, ১৭, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড) প্রার্থী ও নগর বিএনপির সাবেক সদস্য মজিদা বোরহান এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নগর বিএনপির সাবেক সহশিশুবিষয়ক সম্পাদক ইউনুস মিয়া।
চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে কামরুল আহসান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারণ দর্শানোর নোটিশটি আমাকে গতকাল রাত পৌনে ১১টায় মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবির হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছেন। আমি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এর জবাব দেব।’
কারণ দর্শানোর নোটিস পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা হলেন নগর বিএনপর তিন যুগ্ম আহ্বায়ক ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাবিবুর রহমান, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. হারুন অর রশিদ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ মো. আমিনুল ইসলাম। নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিম হাওলাদার, সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ডের জাহানারা বেগম, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সেলিনা বেগম এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রাশিদা পারভীন। দলীয় পদধারী অন্য নেতারা হচ্ছেন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যসচিব জিয়াউল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম, কাজী মোহাম্মদ শাহীন ও ছাত্রদলের জেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জোবায়ের আবদুল্লাহ সাদি।
পদ না থাকলেও সাবেক নেতাদের মধ্যে আছেন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সিদ্দিকুর রহমান, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের জেসমিন সামাদ, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফিরোজ আহম্মেদ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফরিদ উদ্দিন হাওলাদার, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের হুমায়ন কবির ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের খায়রুল মামুন।