নিজামের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে চারটি, বিস্ফোরক আইনে তিনটি, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি, মারামারির ঘটনায় একটি মামলা রয়েছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপনির্বাচনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে শিক্ষায় এগিয়ে তাহসীন বাহার, স্থাবর সম্পদে মো. মনিরুল হক ও মামলায় এগিয়ে মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন। এ ছাড়া অপর প্রার্থী নূর উর রহমান মাহমুদ তানিমের আয়, অস্থাবর, স্থাবর সম্পদ অন্যদের চেয়ে কম। নির্বাচনে কমিশনে দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মনিরুল হক টানা দুবারের সাবেক মেয়র। নিজাম উদ্দিন গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। এবার নতুন মুখ তাহসীন বাহার। তিনি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। নূর উর রহমান মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও ২০১২ সালের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে মনিরুল ও নিজাম বিএনপি ঘরানার (বর্তমানে বহিষ্কৃত) এবং তাহসীন ও নূর উর রহমান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা আছে। এর মধ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইনে চারটি, বিস্ফোরক আইনে তিনটি, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি, মারামারির ঘটনায় একটি মামলা আছে। অতীতে নিজামের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা ছিল। এর মধ্যে দ্রুত বিচার আইনে চারটি ও মারামারির ঘটনায় দুটি মামলা ছিল।
এ ব্যাপারে নিজাম উদ্দিন বলেন, বিএনপির রাজনীতি ও কর্মসূচি করতে গিয়ে এসব মামলা হয়।
মনিরুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে একটি ও আয়কর অধ্যাদেশ আইনে একটিসহ দুটি মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন। অতীতে বিভিন্ন ঘটনায় মনিরুলের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা, মারামারির পাঁচটি, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে দুটি ও ৩৪ ধারায় দুটি মামলা ছিল। এসব মামলা থেকে তিনি খালাস পান। এ ব্যাপারে মনিরুল বলেন, ‘রাজনীতি করতে গিয়ে মামলার শিকার হই।’
মেয়র প্রার্থী নূর উর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি, বিস্ফোরক আইনে একটি ও জননিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা ছিল। অস্ত্র মামলায় তিনি খালাস পান। অপর তিন মামলায় তিনি অব্যাহতি পান। মেয়র প্রার্থী তাহসীন বাহারের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
মনিরুল হকের বাড়িভাড়া থেকে বাত্সরিক আয় ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে বাত্সরিক আয় দুই লাখ। মনিরুলের অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে নগদ টাকা রয়েছে ৩৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪০৬ টাকা। তাঁর স্ত্রী আফরোজা জেসমিনের নামে নগদ টাকা আছে ২ কোটি ৯৬ লাখ ৫৫ হাজার ৩৪৪ টাকা। মনিরুলের ব্যাংকে জমা আছে ৪৩ হাজার ২৯ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ৪৩ লাখ ৫৯ হাজার ১০৯ টাকা। সঞ্চয়পত্র বাবদ তাঁর স্ত্রী আফরোজা জেসমিনের ৪১ লাখ ৭৩ হাজার ১৬৫ টাকা রয়েছে। মনিরুলের ল্যান্ডক্রুজার জিপ একটি, স্ত্রীর জিপ একটি। এ ছাড়া আরও দুটি গাড়ি আছে। মনিরুল ও তাঁর স্ত্রীর স্বর্ণ আছে ১০ তোলা করে। এর দাম ৫০ হাজার টাকা করে। মনিরুলের ৪৭ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও এক লাখ টাকার আসবাব আছে।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে মনিরুলের কৃষিজমি আছে মনোহরগঞ্জের শরীফপুরে ২০ একর নাল, ভিটি, পুকুর। এ ছাড়া লালমাই মৌজায় ১০৪ শতক নাল ও ১৪৬ শতক পুকুর আছে। স্ত্রীর নামে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ১ দশমিক ২৩ একর ডাঙা জমি আছে। এ ছাড়া মনিরুল ও তাঁর স্ত্রীর আফরোজা জেসমিনের নামে ঢাকা ও কুমিল্লায় অকৃষি জমি, দালান, দোকান আবাসিক/বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে।
তাহসীন বাহারের আয়ের উত্স ব্যবসা থেকে বাত্সরিক ১০ লাখ টাকা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৩ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নগদ টাকা ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৯০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৫৬ লাখ ৩ হাজার ৯১০ টাকা। নাইস পাওয়ার অ্যান্ড আইটি থেকে আট লাখ টাকা, সোনালী সুইটস লিমিটেড থেকে ২৫ লাখ টাকা, ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে ১৫ লাখ টাকা, এমবি টেক্সটাইল অ্যান্ড ফ্যাক্টরি থেকে চার লাখ টাকা, গোমতী ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ১০ লাখ টাকা, পোস্টাল, সেভিংস সনদসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতের বিনিয়োগ ১ কোটি ৫ লাখ টাকা, জিপ গাড়ি আছে ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৪০ তোলা স্বর্ণের দাম ১ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ১ লাখ টাকা, আসবাব এক লাখ টাকা ও ব্যবসায় পুঁজি ৫ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রাজধানীর উত্তরায় ৪২ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট আছে।
নিজাম উদ্দিনের চাকরি থেকে বাত্সরিক আয় চার লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ৩২ লাখ ৪০ হাজার ৩৭ টাকা, ব্যাংকে জমা ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭২০ টাকা, বন্ড ৪০ হাজার টাকা, স্বর্ণ ৩০ তোলা, টিভি ও ফ্রিজ ১ লাখ ৯ হাজার টাকা। তাঁর কোনো স্থাবর সম্পদ নেই।
নূর-উর রহমানের ব্যবসা থেকে বাত্সরিক আয় ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ২ লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকা, ব্যাংকে নিজ নামে ২০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ১০ হাজার টাকা আছে। স্ত্রীর ২০ ভরি স্বর্ণ আছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকানায় ৮ শতক জমির মধ্যে তিনি ২ শতকের মালিক। তবে এনআরবিসি ব্যাংকে ৩০ লাখ টাকা ঋণ আছে।
তাহসীন বাহারের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিবিএস ও পেশা কমিশন ব্যবসা। মনিরুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও পেশা ব্যবসা (ঠিকাদারি)। নিজাম উদ্দিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম, পেশা চাকরি। নূর-উর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ ও পেশা ঠিকাদার।
প্রার্থীরা এসব তথ্য হলফনামায় দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন।