জামালপুর শহরে পুরোনো গবাখালের কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজ শুরু করলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ। আজ শুক্রবার সকালে শহরের শেখের ভিটা এলাকা থেকে এই পরিষ্কার অভিযান শুরু হয়েছে। সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্থানীয় কর্মী বাহিনী।
মো. আবুল কালাম আজাদ জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাঁর এলাকার পুরোনো গবাখালের দূষণমুক্ত ও কচুরিপানা অপসারণের কাজ করবেন। এ নিয়ে মাসখানেক আগে তিনি জামালপুর পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন, দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও স্থানীয় কর্মীদের নিয়ে আলোচনা সভা করেন। তাঁদের নিয়ে ওই খালের দূষণ ও কচুরিপানা অপসারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। আজ সকাল আটটা থেকে শুরু হয় কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজ।
জামালপুর শহরকে জলাবদ্ধতা ও বন্যার কবল থেকে রক্ষা এবং মৎস্য আহরণের জন্য ১৯৬০ সালে গবাখালটি খনন করা হয়। এই খালটি ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩০ ফুট প্রশস্ত ছিল। খালটি জামালপুর পৌরসভার শেখের ভিটা এলাকা থেকে শুরু করে মনিরাজপুর, ছুটগড়, সিংড়িবিল, পলিশা, ধোপাকুড়ি, নাকাটি ও দামেশ্বর হয়ে কেন্দুয়া কালবাড়ি বাজারসংলগ্ন ঝিনাই নদীতে সংযুক্ত ছিল। তবে কালের পরিক্রমায় ভরাট আর অবৈধ দখলের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে খালটি। দুই পাড়ের অনেক স্থানেই এখন গড়ে উঠেছে বসতি। গৃহস্থালি, চিকিৎসা বর্জ্য, পলিথিন, প্লাস্টিকসহ ক্ষতিকারক ও অপচনশীল বর্জ্য ফেলে খালের পানি দূষণ করা হয়েছে। পয়োনিষ্কাশনের নালা যুক্ত করা হয়েছে খালে। পুরো খাল ঢেকে গেছে কচুরিপানায়। এসব কারণে খাল দিয়ে পানি প্রবাহ হয় না। মাছ তো দূরের কথা, কোনো জলজ প্রাণীর সন্ধান মিলে না খালের পানিতে।
স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম ও তাঁর কর্মী বাহিনী এই পরিষ্কার অভিযানে অংশ নিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গবাখালটি আজ প্রায় মৃত। শহরের পূর্ব এলাকাসহ উত্তরের পানি এ খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঝিনাই নদীতে পড়ত। এখন শীর্ণধারায় পানির সঙ্গে বিষ নেমে আসে ঝিনাই নদীতে। ফলে নদীও মাছশূন্য এখন। সম্প্রতি জামালপুরে একাধিক সভায় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ নদ, নদী, খাল, বিল উদ্ধার ও রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে এই খালটির দূষণ ও কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর ডাকে সারা দিয়ে আজ থেকে শুরু হয়েছে পরিষ্কার অভিযান। এ সামাজিক কর্মকাণ্ডে সবারই এগিয়ে আসা উচিত। সবার সহযোগিতায় মৃতপ্রায় অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াক, প্রাণ ফিরে পাক গবাখাল।’
সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে অনেকেই অনেক প্রতিশ্রুতি দেন। তবে তার বাস্তবায়ন খুব কমই দেখা যায়। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম আমার নির্বাচনী এলাকার নদ–নদী, খাল বিল উদ্ধার, দখল ও দূষণমুক্ত করব। সেটা আমি বাস্তবে প্রমাণ করে দেখাতে চাই। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সবাইকে কথা দিয়েছিলাম, এই পুরোনো গবাখালকে দূষণমুক্ত ও কচুরিপানা পরিষ্কার করে পুনরায় পানিপ্রবাহ চলাচলের ব্যবস্থা করব। এ কাজের প্রথম ধাপ আজ থেকে শুরু হলো। খাল থেকে পুরোপুরি কচুরিপানা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এ কাজ চলবে। এই কাজে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’