নোয়াখালী সদর উপজেলার এক গৃহবধূকে (৩৫) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৮) নামের এক যুবককে আটক করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আটকের পর তাঁর পকেট থাকা মানিব্যাগে পাওয়া যায় একটি নূপুর। পরে ওই নূপুরের সূত্র ধরে ধরা পড়ে যান জাহাঙ্গীর।
আজ বুধবার দুপুরে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম তাঁর নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ক্লু-লেস’ ওই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও দুই আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়ে এসব তথ্য জানান। গ্রেপ্তার দুই আসামি হলেন—জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর সহযোগী নিজাম উদ্দিন ওরফে শান্ত (২৫)।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মোছলেহ উদ্দিনের আদালতে জাহাঙ্গীর ও নিজাম হত্যা ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক এক ব্যক্তির প্যান্টের পকেটে থাকা ‘মানিব্যাগের’ ভেতর থেকে উদ্ধার করা নুপুরের সূত্র ধরে গৃহবধূকে (৩৫) ধর্ষণ ও হত্যাকারীকে শনাক্তের দাবি করেছে করেছে নোয়াখালীর ডিবি পুলিশ। অভিযুক্ত ওই আসামির নাম মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৮)। আর ওই অপরাধ সংঘটনে জাহাঙ্গীরের সহযোগী ছিলেন নিজাম উদ্দিন ওরফে শান্ত (২৫)। তাঁরা দুজনই হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি শহীদুল ইসলাম বলেন, সদর উপজেলার একটি বাড়িতে ওই গৃহবধূ তিন সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। তাঁর স্বামী কবিরহাট উপজেলায় চাকরি করেন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর সকালে প্রতিবেশীরা ওই গৃহবধূর ঘরের সিঁদকাটা দেখেন। এ সময় প্রতিবেশীরা ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে দেখেন, ওই গৃহবধূ গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে আছেন। তাঁর সন্তানেরা কেউ বাড়িতে ছিল না। গৃহবধূকে প্রথমে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৯ ডিসেম্বর ওই গৃহবধূ মারা যান। তাঁর স্বামী সুধারাম থানায় একটি মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, গত ৩০ জানুয়ারি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিবিকে। ডিবির তদন্ত দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমকে কুমিল্লা থেকে আটক করে। জাহাঙ্গীর পেশায় রিকশাচালক। তিনি ওই গৃহবধূর বাড়ির কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দা। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাহাঙ্গীর ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। তবে মানিব্যাগে নূপুর পাওয়ার বিষয়ে এলোমেলো তথ্য দেন তিনি। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ধর্ষণ, স্বর্ণালঙ্কার ও মুঠোফোন লুট এবং ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) বিজয়া সেন, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, সুধারাম থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম ও জেলা ডিবির ওসি নাজিম উদ্দিন।