ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক নেতার তৈরি ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন’ নামের একটি কার্যালয়ের দখল নিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির একজন নেতা। সেখানে ভবন নির্মাণসামগ্রী বিক্রির দোকান দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের চুন্টা বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে।
দখল নেওয়া বিএনপির ওই নেতার নাম আবদুর রহিম। তিনি চুন্টা ইউনিয়ন শাখা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। আর আওয়ামী লীগের ওই নেতার নাম মাসুদুর রহমান। তিনি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও ঢাকায় ব্যবসা করেন। তিনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮-১০ বছর ধরে চুন্টাবাজারের উত্তর পাশে চুন্টা গ্রামের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন’ নামের একটি কার্যালয় খোলেন। তিনি ঢাকায় থাকলেও মাঝেমধ্যে এলাকায় আসেন। বেশ বড় আকারের কার্যালয়টি ছিল সুসজ্জিত। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপির নেতা আবদুর রহিমের ছেলে নাজমুল ইসলামের নেতৃত্বে কার্যালয়টি ভাঙচুর করা হয়। তখন তাঁরা এলাকায় প্রচার চালান, কার্যালয়টি নাজমুল ইসলাম চার বছর আগে কিনেছিলেন।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার বছর আগে আমার ছেলে মাসুদের ছোট ভাই রাহিম উদ্দিনের কাছ থেকে দোকানঘরটি দুই লাখ টাকায় কিনে নিয়েছে। এত দিন পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে আমরা দোকানের দখল নিতে পারিনি। এখন সময় এসেছে দোকান দখলে নিয়েছি।’
১০ বছর ধরে ওই ঘরটি নিজের ব্যক্তিগত কার্যালয় ছিল জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএনপি নেতা ও তাঁর লোকজন ঘরটি ভাঙচুর করে পাঁচ-সাত লাখ টাকার ক্ষতি করে। এরপর প্রচার করতে থাকে আমার ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে তাঁরা ঘরটি দুই লাখ টাকায় কিনে নিয়েছে। অথচ ওই ঘরের মূল্য এখন প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। আমার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে আমার বিরোধ চলছে। এই সুযোগে তাঁরা এমনটি করেছে।’
বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য ২৩ আগস্ট চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবীর তাঁর কার্যালয়ে উভয় পক্ষ নিয়ে সালিসে বসার আহ্বান জানান। সালিসি সভায় মাসুদুর রহমান উপস্থিত থাকলেও আবদুর রহিম ও তাঁর লোকজন উপস্থিত হননি। পরদিন আবদুর রহিম ওই দোকান দখলে নিয়ে ব্যবসা চালু করে দেন।
মাসুদুর রহমান বলেন, অফিসটি ভাঙচুরের পর তিনি এলাকায় গিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের আহ্বানে তাঁর দপ্তরে সালিসে যান। কিন্তু আবদুর রহিম ও তাঁর লোকজন আসেননি। তাঁরা মাসুদুরকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এ জন্য তিনি এখন এলাকায়ও যেতে পারছেন না, মামলাও দিতে পারছেন না।
চুন্টা ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সালিস বৈঠক ডেকেছিলাম। কিন্তু বিএনপি নেতা এতে সাড়া দেননি। এরপর কোনো পক্ষই আমার কাছে আসেনি। পরে শুনেছি বিএনপি নেতার লোকজন ঘরটি দখলে দিয়ে সেখানে ব্যবসা করছেন।’