রাজশাহীতে চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা। মানববন্ধন থেকে এ মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। এ সময় বক্তারা বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য থাকলে কোনো শক্তিই পরাজিত করতে পারবে না।
গত মঙ্গলবার দুপুরে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানায় চার সাংবাদিকসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বজলুল হক। মামলায় আসামি করা হয়েছে কালের কণ্ঠ’র রাজশাহী ব্যুরোর প্রধান ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরইউজে) সভাপতি রফিকুল ইসলাম, গাজী টেলিভিশনের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপন, দৈনিক করতোয়ার রাজশাহী প্রতিনিধি রোজিনা সুলতানা ও স্থানীয় দৈনিক উপাচার পত্রিকার সাংবাদিক আসগর আলীকে।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় ‘মিডিয়া কার্ড’ তৈরি করা হয়। রাজশাহীতে কর্মরত অধিকাংশ সাংবাদিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ মিডিয়া কার্ড নেন। আসামিরা সমাবেশের আগে ২ ডিসেম্বর দুপুরে নগরের মালোপাড়ায় বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আসেন। তিনি (বাদী) তাঁদের ওই মিডিয়া কার্ড দিলে তাঁরা মিডিয়া কার্ড না নিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা হত্যার হুমকি দেন। এরপর তাঁরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে অপমান, অপদস্থ ও হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য তাঁদের বিষয়ে বিভিন্ন মানহানিকর মন্তব্য করেন। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও বিষয়গুলো প্রচার করেছেন। এতে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
আরইউজের সভাপতি রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হকের সঞ্চালনায় সাংবাদিক ইউনিয়নে বক্তব্য দেন রাজশাহী জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের সভাপতি আহমদ সফি উদ্দিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপন ও নির্বাহী সদস্য বদরুল হাসান, আরইউজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিবলী নোমান ও মামুন-অর-রশিদ, সহসভাপতি তৈয়বুর রহমান, বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী শাখার সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সৌরভ হাবিব, বুলবুল হাবিব প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকেরা যেন প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে না পারে সে জন্য প্রথমেই তাঁদের ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে। তাঁদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ছাত্র-জনতার যে আকাঙ্ক্ষা তা পূরণ হবে না। মানববন্ধন থেকে রাজশাহীর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা বিএনপি নেতার মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক আজাহার উদ্দিন এবং বাঘা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামানের বাড়িতে হামলার নিন্দা জানানো হয়। নুরুজ্জামানকে যে দুটি মামলায় জড়ানো হয়েছে তা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ারও দাবি জানানো হয়।
আহমদ সফি উদ্দিন বলেন, সাংবাদিকদের জন্য নানা বাধাবিপত্তি আগের সময়ে এসেছে, আগামীতেও আসবে। দীর্ঘদিন ধরে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে যে বাধা ছিল, তা হঠাৎ করেই ঠিক হবে না। সাংবাদিকদের জনবিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে।
রাশেদ রিপন বলেন, আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল একটা বৈষম্যহীন, সুশাসনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু এখন এসব কী হচ্ছে। এখন মামলা হচ্ছে, হামলা হচ্ছে। এসবে কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন মাটিচাপা পড়ে যাবে। তবে সাংবাদিকেরা এসব কিছু মোকাবিলা করেই সামনে এগিয়ে যাবেন।