মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় জামালপুরে ছাত্রলীগের ১৮ নেতা-কর্মীকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খাবীরুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক নাফিউল করিম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বহিষ্কৃত নেতা-কর্মীরা হলেন ইসলামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান, সহসম্পাদক মুসা আহমেদ, ইসলামপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সদস্য মুরসালিন উদ্দিন, গাইবান্ধা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির সরকার, চরপুটিমারী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম, নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহসভাপতি আশিকুর রহমান, কর্মী আবদুল কাইয়ুম ও জয় মামুন, মেলান্দহ উপজেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক ইউসুফ আলী, সদস্য আশরাফুল সালেহিন, মেলান্দহ পৌর শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ আহমেদ, মেলান্দহ সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান।
ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত অন্যরা হলেন নাংলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক বরকতুল্লাহ ফারাজী, হাজরাবাড়ি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহিম চৌধুরী, কুলিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন ইসলাম, জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি সাইম কবির, বকশীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শোয়েব আল হাসান ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ি সাংগঠনিক থানা শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুর কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাত্রলীগের জামালপুর জেলা ছাত্রলীগের কিছু নেতা–কর্মীরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ, ছবিসংবলিত পোস্টার, সংবাদ কার্ড ফেসবুকে শেয়ার করে শোক প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ তাঁর মাগফিরাত কামনা করেন। সাঈদীর মৃত্যুর ঘটনার দিন রাতে ও পর দিন সকালে তাঁরা নিজ নিজ ফেসবুকে পোস্টগুলো দেন। বিষয়টি নিয়ে দল ও সংগঠন থেকে সমালোচনা করা হলে পোস্টগুলো আবার সুছে ফেলে ছাত্রলীগের ওইসব নেতা–কর্মীরা।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খাবীরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, যাঁদের সাময়িকভাবে অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে, সত্যিকার অর্থে তাঁদের হৃদয়ে ছাত্রলীগ নেই। তাঁরা ছিল ছাত্রলীগ নামধারী। যেখানে ছাত্রলীগ মানবতাবিরোধীদের ফাঁসির দাবিতে টানা আন্দোলন করেছে, সেখানে ছাত্রলীগের নামধারীরা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাঈদীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। ছাত্রলীগের ওই নেতারা সংগঠনের আদর্শবিরোধী কাজ করেছেন। সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। ফলে তাঁদের সাময়িক অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে সশরীর উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অব্যাহতি পাওয়া ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দিন (গত সোমবার) আমার নানীবাড়ির এক আত্মীয়ের মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যুর জন্য ফেসবুকে আমি ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন লিখে পোস্ট করেছিলাম। সেই পোস্ট এখনো ফেসবুকে রয়েছে। দেখুন নিজের ব্যক্তিগত অর্থ ব্যয় করে, ছাত্রলীগের কার্যক্রম চালিয়েছি। সব সময় কর্মীদের পাশে ছিলাম। এটা নেতা–কর্মীরা জানেন। তারপরও ওই অভিযোগে আমাকে অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে। সংগঠন যদি মনে করে, আমাকে বাদ দিলে ভালো। ফলে সেই বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই আমার।’