সাত বছর আগে রেনু ঋষির সঙ্গে বিয়ে হয় মুকুল চন্দ্র রায়ের। মুকুলের আরেক স্ত্রী থাকার কথা জানার পর তাঁদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। বিচ্ছেদের পরও রেনুদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন মুকুল। এর মধ্যে কাজের খোঁজে গাজীপুরে গিয়ে এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান রেনু। এতে ক্ষুব্ধ হন মুকুল। ওই যুবককে নিয়ে রেনু মায়ের বাড়িতে বেড়াতে এলে মুকুল তাঁদের বাড়িতে যান। কিন্তু মুকুলের আসার খবরে রেনুর মা তাঁদের গোপনে গাজীপুরে পাঠিয়ে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মুকুল রেনুর মা চিন্তা ঋষিকে হত্যা করেন।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌরসভার মধ্যপাড়া এলাকায় চিন্তা ঋষি (৬৬) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার তাঁর জামাতা মুকুল চন্দ্র রায় ও নাতনি জামাতা মহাদেব ঋষির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসব কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) কনক কুমার দাস। আজ মঙ্গলবার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এসব তথ্য জানান।
গতকাল সোমবার বিকেলে মধ্যপাড়া এলাকার বাড়ি থেকে চিন্তা ঋষির লাশ উদ্ধার এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিন্তা ঋষির জামাতা মুকুল চন্দ্র রায়সহ পাঁচ স্বজনকে থানায় নিয়ে যায় দেবীগঞ্জ থানা-পুলিশ। মুকুল হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন এবং তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মহাদেবকেও গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরাসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তার মুকুল চন্দ্র রায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম চণ্ডীহাটি এলাকার খগেশ্বর রায়ের ছেলে এবং মহাদেব ঋষি একই জেলার ডিমলা থানার সোনাখুলি এলাকার দেবদাস ঋষির ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চিন্তা ঋষি একাই বাড়িতে থাকতেন এবং ভিক্ষা করে চলতেন। ৩১ অক্টোবর মুকুল চিন্তা ঋষির বাড়িতে যান। এ সময় চিন্তা ঋষিকে তিনি ২০০ টাকা দিয়ে মুরগি কিনে আনতে বলেন। মুকুল নিজ হাতে রান্না করে চিন্তা ঋষিসহ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। মধ্যরাতে চিন্তা ঋষির ঘরে ঢুকে ধারালো ছোরা দিয়ে তাঁর শ্বাসনালি কেটে হত্যা করেন মুকুল। এ সময় বুকে ও পেটে একাধিকবার আঘাত করেন তিনি। এ সময় চিন্তা ঋষির নাতনি জামাতা মহাদেব ঋষি সেখানে এলে তাঁকে নিয়ে লাশটি বাড়ির টিউবওয়েল-সংলগ্ন কূপে ফেলে মাটিচাপা দেন তাঁরা। পরে রক্ত ধুয়েমুছে ভোরের দিকে তাঁরা পালিয়ে যান।
কনক কুমার দাস বলেন, কয়েক দিন ধরে চিন্তা ঋষির সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা গতকাল দুপুরে তাঁর বাড়িতে খুঁজতে যান। এ সময় টিউবওয়েলের পাশে কূপ থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে তাঁরা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে সেখান থেকে চিন্তা ঋষির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রঞ্জু আহম্মেদ বলেন, নিহত চিন্তা ঋষির মেয়ে রেনু ঋষি ৭ নভেম্বর গ্রেপ্তার দুজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও দু–তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতে হাজির করার প্রক্রিয়া চলছে।