বর্তমানে যাঁরা সহিংস শক্তি প্রদর্শন করতে পারছেন, তাঁদের কথায় রাষ্ট্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। তিনি বলেছেন, সরকার নিজেকে রাষ্ট্র মনে করে। তাই জনগণকে কোনো মূল্যায়ন করে না। আগে ভোট ছিল, তাই কিছুটা হলেও জনগণের মূল্যায়ন ছিল। এখন ভোটের সময়ও জনগণের মূল্যায়ন নেই।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে নেত্রকোনায় হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স নেটওয়ার্ক আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। নেত্রকোনা শহরের শিবগঞ্জ রোডে বেসরকারি সংস্থা স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির সম্মেলনকক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘যাঁরা সহিংস শক্তি প্রদর্শন করতে পারছেন, তাঁদের কথায় রাষ্ট্র চলছে। কিন্তু আমরা এটি চাই না। আমরা একটা ন্যায়বিচারের সমাজ চাই। যে সমাজে মানুষ তার অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে পারে। আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত থাকবে। বঙ্গবন্ধুও এ কথাগুলো বলেছিলেন। তিনি ৭ মার্চের ভাষণে চারটি কথা স্পষ্ট করে বলেছিলেন। যাঁরা এখন আওয়ামী লীগ করেন, তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে ভালো করে পড়েন না। শুধু মুখে মুখে বঙ্গবন্ধু। অন্তরে বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করলে সভ্য সমাজ হতো। আমরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যে কথা বলেছি, তা বাস্তবায়ন চাই।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল থেকে শুরু করে দেশে উন্নয়ন অনেক হচ্ছে। কিন্তু অনেক গরিব মানুষ সেখানে চলতে পারে না। নিজেদের সুবিধার জন্য তারা এসব করে বলছে, দেশে বিরাট উন্নয়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে।” নয়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন খুবই ভালো মানুষ। তিনিও স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কথা বলছেন। রেলমন্ত্রী রেলের দুর্নীতির কথা বলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই দুর্নীতি থামাবেন কে? আমি এসব বলি দেখে এক মন্ত্রী বলেছিলেন, “মানবাধিকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।”’
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সুলতানা কামাল বলেন, ‘একটি সভ্য সমাজে এটি হতে পারে না। বিচারবহির্ভূত হত্যা একটা হলেও সেটা অপরাধ। তাই আমরা এর প্রতিবাদ জানাবই। আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, “কোনো অপরাধীকে যে অপরাধের জন্য ধরা হয়েছে, তাঁকে সেই আনুপাতিক শাস্তির চেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া যাবে না।” আইন মানুষকে শাস্তি বা কষ্ট দেওয়ার জন্য নয়; বরং শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের পরিবেশ তৈরির জন্য। আমরা এখন অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের দিকে যাচ্ছি। তাই শুধু উন্নয়ন হলেই হবে না। সেই সঙ্গে সভ্যতারও বিকাশ হতে হবে।’
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন ও স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সীতাংশু বিকাশ আচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আশিক নূর, জেলা উদীচীর সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের নেত্রকোনা জেলা শাখার সভাপতি পূরবী কুণ্ডু, জেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নাজমুল কবীর সরকার প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভায় তৃণমূল পর্যায়ের মানবাধিকারকর্মীরা বিভিন্ন উপজেলার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।