কুড়িগ্রামে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে দুধকুমার নদের পর ধরলার পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীতীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করায় কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এই পয়েন্টে নদের পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার এবং তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুধকুমার নদের পানির স্রোতে কচাকাটা থানা থেকে নাগেশ্বরী উপজেলা শহরের সংযোগ সড়ক লুচনী নুরানি মাদ্রাসা–সংলগ্ন এবং টেপার কুঠি মাদ্রাসা–সংলগ্ন স্থানে ভেঙে গেছে। উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৬ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। এতে ওই দুই ওয়ার্ডের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া কালীগঞ্জ ইউনিয়নের ঢেপঢেপি, কৃষ্ণপুর, নামাপাড়া, নুনখাওয়া ইউনিয়নের কাঠগিরির চর, ফকিরপাড়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়ন, সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়ন এবং রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৯ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের আরও প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রায় দুই শতাধিক চর প্লাবিত হয়েছে।
চর লুচনী গ্রামের বাসিন্দা মো. রজব আলী জানান, উজানের ঢলের কারণে বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের চর লুচনী, আনন্দবাজার, টেপারকুঠি, উত্তর লুচনী, ফান্দের চর, বিষ্ণপুর গ্রাম, আনন্দবাজার এলাকার শতকরা ৮০ শতাংশ বাড়িতে পানি উঠেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
নুনখাওয়া ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের মো. রেজাউল ইসলাম জানান, দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফকিরপাড়াসহ আশপাশের কয়েকটি চরের প্রায় দুই শতাধিক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। এ ছাড়া পানিবন্দী হয়ে পড়েছে আরও প্রায় শতাধিক পরিবার। সম্ভবত আসামের পানি ছেড়ে দিয়েছে। নাহলে পানি এত দ্রুত বাড়ার কথা নয়। যেভাবে পানি বাড়ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে বসতবাড়ি রেখে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিতে হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ প্রথম আলোকে বলেন, কুড়িগ্রামে উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের উদ্ধারের জন্য চারটি স্পিড বোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নগদ ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা, ৬৫০ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার প্রস্তুত রেখেছেন।