মেহেরপুর–১ (সদর–মুজিবনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে মেহেরপুর পৌর কমিউনিটি হলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বিশেষ মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান। ফরহাদ হোসেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
এ বিষয়ে আজ ফরহাদ হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ধরেননি। তবে গতকাল সোমবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যেসব নেতা আমার বিরোধিতা করছেন, অনেক সময় তাঁদের অনেক দাবিদাওয়া আমি পূরণ করতে পারিনি। আমি স্বচ্ছ রাজনীতি করি। এলাকার মানুষ যাতে ভালো থাকতে পারে, সেই চেষ্টা করি। চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীরা আমার কাছে ঠাঁই না পাওয়ায় তাঁরা বিরোধিতা করছেন। যাঁরা এসব করছেন, প্রত্যেককে আমি নানা সময়ে সাহায্য-সহযোগিতা করেছি।’
জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিয়াজান আলী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইয়ারুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল, মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউদ্দিন বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এস এম ইমন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মান্নান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সভায় মিয়াজান আলী বলেন, মেহেরপুরে আওয়ামী লীগকে এক ব্যক্তি ঘরবন্দী করে রেখেছেন। তবে সময় এসেছে আওয়ামী লীগকে আবার রাজপথে সক্রিয় করার। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেনের হাতে নেতৃত্ব চলে যাওয়ায় দলের ত্যাগী নেতা–কর্মীরা ছিটকে পড়েছেন। এর সুযোগ নিয়েছে বিএনপি–জামায়াত। আগামী সংসদ নির্বাচনে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। ফরহাদ হোসেনকে আবার মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁর পক্ষে কাজ করবেন না।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল বলেন, ‘সারা জীবন আওয়ামী লীগের জন্য জেল–জুলুম, বোমা হামলার শিকার হয়েছি। এরপরও আমি নাকি আওয়ামী লীগের কেউ না। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজের পছন্দমতো লোকদের নিয়ে দল চালান। সেখানে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতারা ঠাঁই পান না। যখন নির্বাচন আসে তখন তিনি দল গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। পরে কাউকে মনে রাখেন না। প্রধানমন্ত্রীর কছে আকুল আবেদন, এমন নেতাকে যেন মনোনয়ন না দেওয়া হয়। তাঁকে বাদ দিয়ে যে কাউকে মনোনয়ন দিলে তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা এক হয়ে কাজ করবেন।’
জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক আবদুস শুকুর বলেন, শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি জেলা উন্নত করেছেন। অন্য জেলার মতো মেহেরপুরেও উন্নয়ন হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে ফরহাদ হোসেন এলাকায় কোনো কাজ করেননি। তবে নিজের পরিবারের উন্নয়ন করেছেন। নিজের পছন্দের লোক দিয়ে দল পরিচালনা করছেন। আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা–কর্মী তাঁকে সংসদ সদস্য দেখতে চান না।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের তিন শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এদিকে ফরহাদ হোসেনের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে তাঁর বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁর পক্ষের নেতা-কর্মীরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ফরহাদ হোসেন ভগ্নিপতি বাবলু বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম শাহিন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফরহাদ হোসেনের বড় ভাই ইমতিয়াজ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন। ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে তাঁদের কী নিয়ে দ্বন্দ্ব তাঁদের জানা নেই। বিএনপি-জামায়াতের মতো আচরণ করছেন তাঁরা। তাঁরা সংগঠন বিরোধী কার্যক্রম করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।