কুষ্টিয়া-২ আসনে ‘২০ পয়সাকে’ ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগ

হাসানুল হক ইনু
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে টানা তিনবার মহাজোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে এবার আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা আসনটি জাসদকে ছেড়ে দিতে নারাজ। তাঁরা আওয়ামী লীগের কাউকে নৌকা প্রতীক দিতে কেন্দ্রে যোগাযোগ করছেন। ইতিমধ্যে পাঁচজন দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ফরম কিনেছেন।

আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ক্ষোভ, হাসানুল হক ইনু নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের তেমন মূল্যায়ন করেন না। বিভিন্ন সময়ে সংসদীয় আসনের দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে জাসদের নেতা–কর্মীদের মারামারি ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটে। মামলা, হামলা ও ভাঙচুর করা হয় বাড়িঘর। নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, আসনটি বারবার শরিকদের ছেড়ে দেওয়ায় বঞ্চিত হয়েছেন তাঁরা। এবার সেই বঞ্চনার অবসান চান তাঁরা।

মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনয়নপ্রত্যাশী কামারুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার যেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়। জোটের কেন্দ্রীয় নেতাকে (ইনু) দেশের যেকোনো প্রান্তে মনোনয়ন দেওয়া হোক। তিনি (ইনু) প্রায়ই বলেন, “২০ পয়সা ছাড়া ৮০ পয়সা অচল। ২০ পয়সা না হলে ৮০ পয়সা নাকি ১০০ পয়সা হয় না।” তাই এবার ৮০ পয়সাকে ছাড় দেওয়ার আহ্বান জানাই। মাত্র ২০ পয়সাকে বাদ দিয়ে যেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এটা সভানেত্রীর কাছে জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।’

কামারুল আরেফিন ছাড়াও মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাহার আলী, ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শরীফুজ্জামান, আওয়ামী পরিবারের সন্তান কামরুল আরিফিন ও চিকিৎসক ইফতেখার মাহমুদ নৌকার প্রার্থী হতে চেয়ে ফরম কিনেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলায় আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। নেতা–কর্মী ও সর্মথক থাকার পরও শরিকদের কারণে ১৯৭৩ সালের পর আওয়ামী লীগের কেউ এ আসনে প্রার্থী হতে পারেননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু মহাজোটের হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে জয়ী হন। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য হন। সম্প্রতি ভেড়ামারায় একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা এককাট্টা হয়ে জাসদকে আর সুযোগ না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। মিরপুর উপজেলার নেতা–কর্মীরাও বিভিন্ন সভা–সমাবেশে হাসানুল হক ইনুকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানান।

ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭৩ সালের পর থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগের কেউ সংসদ সদস্য হননি। তাঁদের প্রত্যাশা, এবার যেন আওয়ামী লীগের কেউ মনোনয়ন পান। তবে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে সব সময় মেনে নেবেন বলে জানান।

মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আলী বলেন, এলাকার আওয়ামী লীগের কিছু নেতা শরিকদের বিরোধিতা করেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ কর্মী–সমর্থক ইনু ভাইকে পছন্দ করেন। জোটের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে ইনু ভাই–ই এ আসনে মনোনয়ন পাবেন।

জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন প্রথম আলোকে বলেন, জোটের শরিক দল হিসেবে চাওয়া–পাওয়া থাকে। কেন্দ্রীয়ভাবে সবকিছু করা হয়। জোটের নেতারা সব সিদ্ধান্ত নেন। মিরপুর–ভেড়ামারায় বর্তমানে জাসদের নেতা–কর্মীরা এগিয়ে আছেন। তাঁদের কর্মী–সমর্থক বেশি। এ ক্ষেত্রে শরিক দল হিসেবে সেখানে জাসদের কোনো বিকল্প হতে পারে না।