ভুট্টার বাম্পার ফলন, বাজারে দাম ভালো 

শেরপুরের নকলায় খেত থেকে ভুট্টা তুলছেন দুই কৃষক। উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বন্দটেকি গ্রামে ২০ এপ্রিল
ছবি: প্রথম আলো

শেরপুরের নকলা উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকেরা দামও পাচ্ছেন ভালো। কম খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকেরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। এ বছর নকলা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বোরো ধানের আবাদ কমলেও ভুট্টার চাষ বেড়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মৌসুমে নকলা উপজেলায় ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এর বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন। ভুট্টা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পক্ষ থেকে ১ হাজার ৫০০ কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে বিনা মূল্যে ২ কেজি করে ভুট্টাবীজ এবং ২০ কেজি করে ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। নকলা পৌরসভাসহ নয়টি ইউনিয়নেই কমবেশি ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। এখন বিভিন্ন খেত থেকে ভুট্টা তোলা শুরু হয়েছে।

২০ এপ্রিল দুপুরে উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বন্দটেকি ও জানকিপুর গ্রামে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে সব জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। অধিকাংশ খেতেই ভুট্টার থোড় এসেছে। কয়েকটি খেতে ভুট্টা পেকেও গেছে। কয়েকজন কৃষক খেত থেকে ভুট্টা তুলছেন।

বন্দটেকি গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, তিনি এবার প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছেন। এ জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। গম ও বোরো ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে পানি কম লাগে। এতে খরচও কম হয়। এবার ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে। তিনি ইতিমধ্যে ১০ শতাংশ জমির ভুট্টা কেটেছেন। ফলন পেয়েছেন প্রায় ১০ মণ। বর্তমানে কাঁচা ভুট্টার দাম প্রতি মণ ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। পুরো জমির ভুট্টা কাটা শেষে তাঁর ভালো লাভ হবে বলে জানান তিনি।

মোর্শেদ আলম বলেন, প্রায় ১ একর জমিতে তিনি ভুট্টার আবাদ করেছেন। খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও রাসায়নিক সার দিয়েছে। প্রতি শতাংশে এক মণ ভুট্টা উৎপাদিত হবে। আশা করছেন ভুট্টা বিক্রি করে তিনি লাভবান হবেন।

গতকাল উপজেলার চন্দ্রকোনা বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, বর্তমানে বাজারে ভুট্টার আমদানি ও বেচাকেনা বেড়েছে। খেত থেকে তোলা কাঁচা ভুট্টা প্রতি মণ ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আর রোদে শুকানো ভুট্টা প্রতি মণ ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৪ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে। অপর দিকে চলতি রবি মৌসুমে ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আর আবাদ হয়েছে ২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ ৪৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ বেশি হয়েছে। এভাবে প্রতিবছরই ভুট্টার আবাদ বাড়ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল ওয়াদুদ বলেন, স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদনকারী ফসল ভুট্টা। দেশে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি পোলট্রি, ডেইরি ও ফিশ ফিড হিসেবেও এর চাহিদা প্রচুর। তাঁরা কৃষকদের ভুট্টা উৎপাদনে সহায়তা করছেন।