শেরপুরে মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলার ঘটনায় আহত একজনের মৃত্যু

নিহত মো. হাফেজ উদ্দিন
ছবি: সংগৃহীত

শেরপুরের খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবারে (মুর্শিদপুর পীরের দরবার) হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আহত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

নিহত ওই ব্যক্তির নাম মো. হাফেজ উদ্দিন (৪০)। তিনি শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের কান্দাশেরীরচর গ্রামের মো. ইদু মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন।

গতকাল মঙ্গলবার ভোরে শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকার মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের প্রতিরোধ করতে গেলে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৩ জন আহত হয়েছেন। হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সাতজনকে আটক করেছে।

নিহত হাফেজ উদ্দিন দরবারে হামলাকারী পক্ষের লোক ছিলেন। গতকাল গুরুতর আহত হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে নেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে তিনি মারা যান।

হাফেজ উদ্দিনের বাবা ইদু মিয়া (৮০) প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে হাফেজের পরিবারে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে রয়েছেন। কাঠমিস্ত্রির কাজ করে হাফেজ সংসার চালাতেন। কোনো রাজনীতি বা দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। মঙ্গলবার ভোরে নামাজ পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। এরপর তাঁর ছেলের গুরুতর আহত হওয়া এবং আজ সকালে মৃত্যুর সংবাদ পান। ছেলের হত্যার ঘটনায় যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিচার ও শাস্তির দাবি করেন ইদু মিয়া।

লছমনপুর জামতলা এলাকার ফারাজিয়া আল-আরাবিয়া কওমি মাদ্রাসার পরিচালক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ মুরশিদপুর পীরের দরবারে ইসলাম ধর্ম ও শরিয়ত পরিপন্থী কর্মকাণ্ড চলে আসছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে তাঁরা প্রতিবাদ এবং ওই দরবার বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন। এরপর বিষয়টি আপসের কথা বলে ডেকে নিয়ে তাঁদের লোকজনকে বেদম মারধর করেছেন দরবারের লোকজন। এতে কাঠমিস্ত্রি হাফেজ উদ্দিন গুরুতর আহত হয়ে মারা গেছেন। তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষী ও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মুর্শিদপুর পীরের দরবারের অন্যতম খাদেম মো. ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, হাফেজ উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে তাঁরা জড়িত নন। বরং দরবারে হামলার ঘটনার পর থেকে তাঁরা আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন।

সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, হাফেজ উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে মুর্শিদপুর দরবার শরিফের পক্ষ থেকে দেওয়া অভিযোগটি থানায় মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।

পুলিশ, মামলার এজাহার ও দরবার শরিফ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক ও এলাকাবাসী সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকায় অবস্থিত মুর্শিদপুর দরবার শরিফের কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, পীরের দরবারে ইসলাম পরিপন্থী কার্যকলাপ পরিচালিত হয়। গতকাল ভোরে মাদ্রাসাশিক্ষক মো. তরিকুল ইসলামসহ ৪০০-৫০০ মানুষ মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা চালান। তাঁরা দরবারের টিনের বেড়া ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। এ সময় দরবারে থাকা খাদেম ও অন্য মুরিদরা তাঁদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন আহত হন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।