ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিলেই সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে শুরু করে এক কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণের প্রলোভন দেখানোর ঘটনায় লক্ষ্মীপুরে তিনটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৭৮ জনকে আসামি করা হয়েছে, এর মধ্যে এজাহারে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে ও গতকাল মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর সদর, রামগতি ও কমলনগর থানায় এই তিনটি মামলা হয়। সদর থানায় করা মামলার বাদী মো. সেলিম নামের এক ভুক্তভোগী। মামলাটিতে উম্মে হানি নামের এক নারীকে প্রধান আসামি করে করে ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। রামগতি থানায় করা মামলাটির বাদী আবু ইউসুফ নামের এক ভুক্তভোগী। ওই মামলায় হাসিনা বেগম নামের এক নারীকে প্রধান করে ৫ জনের নাম উল্লেখসহ ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। কমলনগর থানায় ভুক্তভোগী ওমর ফারুকের করা মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে। তিন মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের সবাই লক্ষ্মীপুর জেলার বাসিন্দা।
গত রোববার রাতে ‘অহিংস আন্দোলন বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের সমাবেশে নেওয়ার জন্য লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তিন শতাধিক নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীকে জড়ো করা হয়। পরে রাতেই স্থানীয় লোকজন তাঁদের ঘেরাও করে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেন। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাতটি গাড়ি জব্দ করেছেন। এর মধ্যে তিনটি বাস ও চারটি মাইক্রোবাস।
পুলিশ জানায়, ঘটনার রাতে ৮৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। তাঁদের মধ্যে সাতজনকে গাড়িভাড়া বাবদ এক হাজার টাকা করে উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত থাকায় গ্রেপ্তার করা হয়। বাকিদের মধ্যে তিনজন তিনটি মামলার বাদী। অন্য সবাই মামলায় সাক্ষী হয়েছেন। যাঁদেরকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য জড়ো করা হয়েছে, তাঁরা সবাই নিরীহ ও সহজ-সরল প্রকৃতির।
পুলিশ ও বাসযাত্রী নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একটি চক্র সোমবার ঢাকার শাহবাগ কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে যোগ দিতে তাঁদের উদ্বুদ্ধ করে। ঋণের আবেদন ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে চক্রটি এক হাজার টাকা করে নিয়েছে। ঋণপ্রত্যাশী ও সম্মেলনে উপস্থিতির জন্য দেওয়া হয়েছে টোকেন। টোকেনধারী সবাইকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে এক লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ দেওয়ার কথাও জানানো হয়।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় সমাবেশের নামে মূলত সরকারকে বিব্রত করার উদ্দেশ্যে গ্রামের লোকজনকে ঢাকায় নেওয়ার চেষ্টা করা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এটি প্রতারণা, তা মোটামুটি নিশ্চিত পুলিশ। তদন্তের পর আরও বিস্তারিত জানা যাবে।