বিজেপির নেতারা বাংলাদেশের কয়েকটি সীমান্তে এসে অবরোধ করছেন। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশে নাকি হিন্দুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। কই আমরা তো শুনলাম না। বাংলাদেশে তো অনেক বিদেশি মিশন আছে। তারাও তো জানবে এসব বিষয়গুলো; কিন্তু ভারতের মিডিয়াগুলো দিনরাত মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।
আজ সোমবার বিকেলে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার রূপসা গ্রামের শহীদ রফিকুল ইসলামের বাড়িতে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ পরিবার এবং আহত ছাত্র ও জনতাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ওই সভার আয়োজন করে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামের একটি সংগঠন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার, কথা বলার অধিকার, সমাবেশ-মিছিল করার অধিকার আছে তা বিশ্বাস করত না আওয়ামী লীগ। শেখ মুজিবুর রহমানের আমল থেকে আওয়ামী লীগ তা বিশ্বাস করত না। এ কারণে তার (শেখ হাসিনার) বাবার আমল ছিল বাকশাল। সব দল ও পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে বাকশাল গঠন করেছিল। শেখ মুজিবের মেয়ে শেখ হাসিনা দেখেছে, তার বাবার বাকশাল ব্যর্থ হয়েছে; কিন্তু তার (শেখ হাসিনা) বাকশাল ব্যর্থ হতে দেবে না। শেখ হাসিনা আরেকটি বাকশাল তৈরি করল। সে–ও বিভিন্ন মিডিয়া বন্ধ করেছে। কেউ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করলে তাঁকে মাসের পর মাস কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এই বাকশালের অবসানের জন্যই এই গণ-অভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছেন ছাত্র-জনতা।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে বাঁচিয়ে রাখতে শেখ হাসিনাকে যে দেশ (ভারত) আশ্রয় দিয়েছে, তাদের ঘুম নেই। তাঁদের খুবই মাথাব্যথা। সারা পৃথিবী থেকে এই পটপরিবর্তনকে অভিনন্দন ও সমর্থন জানানো হয়েছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভয়ংকর এক স্বৈরাচারকে, যিনি নিজ দেশের শিশুদেরও হত্যা করতে দ্বিধা করেননি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য, তাঁকে আশ্রয় দিয়েছে। তাঁর জন্য যে কত কান্নাকাটি করছে, মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে, কত মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে, তার শেষ নেই। অথচ বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হাজার বছরের।’
ভারত সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা নিজেদের দেশের দিকে তাকান না কেন! এক গুজরাটেই এক-দুই দিনের মধ্যেই দুই হাজার মুসলমানকে জবাই করলেন! ৪০০ বছরের একটি মসজিদকে ভেঙে আপনারা রামমন্দির বানালেন। আপনাদের মতো ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতা পৃথিবীতে আর কেউ না। আপনাদের সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদিতা পৃথিবীর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। এত ঘটনার পরও আপনাদের কোনো দোষ নেই! সব দোষ বাংলাদেশের?’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ওরে বাপরে বাপ, ভারতে তুলকালাম কাণ্ড! আপনারা তো ভারতের মধ্যে কত মুসলমান নেতাকে, খ্রিষ্টান নেতাকে গ্রেপ্তার করছেন, আমরা কিছু বলি না। সরকারের গোয়েন্দা বাহিনীগুলো তদন্ত করে দেখেছে, ইসকনের কতিপয় নেতা মিথ্যা ও অপপ্রচারে লিপ্ত।’
বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, ‘আমাদের আলু, চাল, পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলছে ভারত। দেন, আমরা তো আগে আলু আমদানি করতাম না। গত বছর থেকে আলু আমদানি করছি। আর তা শেখ হাসিনার জন্যই আমদানি করতে হয়েছে। ভারতনির্ভর দেশ গড়ার তিনি এই চেষ্টা চালিয়েছেন। আমাদের দেশে সিজনে (মৌসুমে) ৭ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা কেজি দামে প্রচুর আলু হয়, চার-পাঁচ বছর আগেই দেখেছি। সেই আলু এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি! সব তো তাঁর (শেখ হাসিনা) অবদান। যদি আমদানি বন্ধ করে দেন, তাহলে তো আপনাদেরই ব্যবসায়ে ক্ষতি হবে। আপনারা তো বিনা পয়সায় দেন না। ডলার দিয়ে কিনে আনি। আমদানি বন্ধ করে দিলে আমাদের দেশের কৃষক আরও বেশি আলু উৎপাদনে উদ্যোগী হবেন।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ এবং আহত ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। তাঁদের অবদানের কথা স্মরণ করতে তাঁদের নামে স্থাপনা ও সড়কের নামকরণ করতে হবে। বিএনপি জনগণের দল। আগামীতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে তাঁদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হবে।
‘আমরা বিএনপি পরিবার-এর’ সভাপতি আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান, সংগঠনটির উপদেষ্টা এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত ও প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহত ছাত্রী ও এক যুবক। পরে আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।