ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় কারখানা চালু ও বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। আজ সোমবার সকালে অবদুল্লাহপুর–বাইপাইল সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় এ কর্মসূচি শুরু করেন জেনারেশন নেক্সট গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা। এক ঘণ্টা পর সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
এদিকে গতকাল রোববার আশুলিয়ার বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা, হাজিরা, টিফিন, নাইট বিল বৃদ্ধির বাস্তবায়ন ও কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ঘোষণাসহ নানা দাবিতে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আজ শ্রম আইন ২০০৬–এর ১৩(১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ৪৩টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। এ বিষয়ে নোটিশ কারখানার মূল ফটকের সামনে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৮টি কারখানা সাধারণ ছুটি রয়েছে।
আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার হা-মীম গ্রুপের কারখানার ফটকে ২২ সেপ্টেম্বর তারিখ উল্লেখ করে টানানো বন্ধের নোটিশে বলা হয়েছে, আশুলিয়া শিল্প অঞ্চলের বর্তমান সহিংসতা ও অস্বিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬–এর ধারা ১৩(১) অনুসারে সোমবার (আজ) থেকে দ্যাটস স্পোর্টস ওয়ার লিমিটেড, অ্যাপারেল গ্যালারি, রিফাত গার্মেন্টস, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং, আর্টিস্টিক ডিজাইন, নেক্সট কালেকশন লিমিটেড কারখানাগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের অধীন সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিরামিক, প্লাস্টিক, চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা রয়েছে ১ হাজার ৮৬৩টি। এসব কারখানার মধ্যে আজ ৪৩টি কারখানা শ্রম আইন ২০০৬–এর ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ৮টি কারখানায় সাধারণ ছুটি রয়েছে।
আজ সকালে নির্ধারিত সময়ে কারখানাগুলোয় যান শ্রমিকেরা। সকাল ১০টার দিকে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় জেনারেশন নেক্সট গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বেলা ১১টার পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
জেনারেশন নেক্সট গার্মেন্টসের এক শ্রমিক অভিযোগ করেন, ‘গত দুই মাসের বেতন বকেয়া। ১৫ তারিখে (১৫ সেপ্টেম্বর) বেতন দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু দেয়নি। বাসাভাড়া দিতে পারতেছি না। কারখানায় আমরা কোনো ভাঙচুর করিনি। অন্য কারখানার লোকজন হামলা করছিলেন। এখন কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখছে। আমরা চাই আমাদের বেতন দিক, কারখানা খুলে দিক।’
আশুলিয়ার শিল্প পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের অধীন সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে মোট ৪৩টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ৮টি কারখানা সাধারণ ছুটি রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই আশুলিয়ার তৈরি পোশাক কারখানা। সকালে জেনারেশন নেক্সট গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে তাঁদের বুঝিয়ে সড়কে থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু কারখানার শ্রমিকেরা তাঁদের দাবি বাস্তবায়নের বিষয় নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন।’
এদিকে আজ দুপুরে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ থেকে জানানো হয়, সাভারের আশুলিয়ায় ২৭২টি পোশাক কারখানার মধ্যে নাসা, নিওএইজ, অনন্ত, হা-মীম, এনভয়, দেবোনিয়ার গ্রুপের কারখানাসহ মোট ২৭টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া সবেতন ছুটি কিংবা শ্রমিকেরা কারখানায় উপস্থিত হয়ে কাজ বন্ধ রেখেছেন অথবা শ্রমিকেরা চলে গেছেন—এমন কারখানার সংখ্যা ১২। আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ২৬৭টি এবং বেতন পরিশোধ করেনি ৫টি কারখানার মালিক।