সংসার চালাতে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়েছিলেন আইয়ুব আলী ওরফে সাগর (২৮)। ঋণের কিস্তি পরিশোধে তিনি সৎখালার বাড়িতে যান। খালা টাকা না দেওয়ায় খালার বাড়িতে চুরির পরিকল্পনা করেন তিনি।
কিন্তু চুরির সময় দেখে ফেলেন খালা রওশন আরা। জানাজানি হওয়ার ভয়ে তিনি প্রথমে খালাকে শিল দিয়ে আঘাত করেন। পরে শ্বাসরোধে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। খালাতো দুই ভাই মাহিন (৩) ও সাজিদ (১০) জেগে উঠলে তাদেরও একে একে হত্যা করেন আইয়ুব।
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে নিজ ঘরে মা ও দুই শিশু ছেলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করে এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আইয়ুবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান।
গ্রেপ্তার আইয়ুব সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার নন্দিগাতী গ্রামের মোকছেদ মোল্লার ছেলে। সম্পর্কে তিনি নিহত রওশন আরার সৎভাগনে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান জানান, ১ অক্টোবর বেলকুচি উপজেলার মবুপুর গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে মা ও দুই শিশুসন্তানের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি হত্যাকাণ্ড মনে হলেও পুলিশের কাছে কোনো সূত্র (ক্লু) ছিল না। পরবর্তী সময়ে নানা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে উল্লাপাড়া থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত আইয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা শিকার করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
গ্রেপ্তার আসামির জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান বলেন, আইয়ুব আলী পেশায় একজন তাঁতশ্রমিক। নিজের আয় দিয়ে সংসারের ব্যয় মেটাতে না পেরে তিনি বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেন। একপর্যায়ে সংসারের খরচ ও ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করা তাঁর পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কিস্তির টাকা জোগাড় করতে তিনি ২৬ সেপ্টেম্বর সৎখালা রওশন আরার বাড়িতে যান। কিন্তু টাকা না পেয়ে তাঁকে ফেরত আসতে হয়। ঋণ পরিশোধে চুরি করার জন্য তিনি ২৮ সেপ্টেম্বর আবার খালার বাড়িতে যান এবং সেখানে রাতে খাবার খেয়ে একই ঘরে ঘুমান।
পুলিশ সুপার বলেন, রাত গভীর হলে খালার কাছ থেকে চাবি চুরি করে ট্রাংকের ভেতর থেকে টাকা ও গয়না খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন আইয়ুব আলী। এ সময় খালা রওশন আরা জেগে উঠলে তিনি ঘরে থাকা পাথরের শিল দিয়ে তাঁকে সজোরে আঘাত করেন। শিলের আঘাতে রওশন আরা আহত হলে তিনি শ্বাসরোধে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এ সময় ছোট খালাতো ভাই মাহিন (৩) কান্না শুরু করলে তাঁকেও গলাটিপে হত্যা করেন। পরে আরেক ছেলে সাজিদ (১০) জেগে উঠলে তাঁকেও হত্যা করেন তিনি।
পুলিশ জানায়, ২৯ সেপ্টেম্বর ভোরের আলো দেখা দিলে তিনি বাইরে থেকে ঘরের শিকল আটকে পালিয়ে যান। ঘটনার তিন দিন পর ১ অক্টোবর প্রতিবেশীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁদের লাশ উদ্ধার করে। আসামি আইয়ুব আলীকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।