ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে বর্তমানে পাঁচটি ব্যায়ামাগার রয়েছে। এর মধ্যে কেবল দুটিতে শরীরচর্চার সুযোগ পান নারীরা। এর একটিতে গোপনে নারীদের আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার প্রতিবাদ করে মারধরের শিকার হয়েছেন এক নারী, তাঁর বোনসহ তিনজন। এর পর থেকে ব্যায়ামাগারে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ব্যায়ামাগারের মালিক, প্রশিক্ষক ও সদস্যরা বলছেন, কঠোর নজরদারি, ক্যামেরার ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ এবং সবাই সচেতন হলে এ ধরনের ঘটনা থেকে নারীদের নিরাপদ রাখা সম্ভব।
গত বুধবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌলভীপাড়ায় বিএস ফিটনেস ক্লাব নামের একটি ব্যায়ামাগারে আপত্তিকর ভিডিও ধারণের প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে এক গৃহবধূ, তাঁর বোনসহ তিনজনকে আটকে রেখে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ব্যায়ামাগারের পরিচালক হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়াসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আটক তিনজনসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও আট থেকে নয়জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেছেন ওই গৃহবধূ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৩ সালের জুন মাসে প্রথম শহরের পৈরতলা এলাকায় একটি ব্যায়ামাগার চালু করেন শেখ তৌফিক আহমেদ নামের এক ব্যক্তি। ২০০৫ সালে ব্যায়ামাগারটি শহরের টিএ রোড এলাকায় স্থানান্তরিত করে নাম দেওয়া হয় ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বডি বিল্ডিং সেন্টার (বিবিবিসি)’। সম্প্রতি শহরের ফারুকী পার্কের অবকাশ এলাকায় ‘অবকাশ ফিটনেস সেন্টার’ নামে আরেকটি ব্যায়ামাগার চালু করেছেন শেখ তৌফিক আহমেদ। তাঁকে অনুসরণ করে জেলায় আরও তিনটি ব্যায়ামাগার চালু হয়েছে। এগুলো হলো শহরের বোর্ডিং মাঠ এলাকায় ‘স্মার্ট ফিটনেস সেন্টার’, টেংকেরপাড় এলাকায় ‘ফিটনেস অন ফায়ার’ ও মৌলভীপাড়া এলাকার ‘বিএস ফিটনেস ক্লাব’। বিএস ফিটনেস ক্লাব চলতি বছরেই চালু হয়েছে।
২০১২ সাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বডি বিল্ডিং সেন্টারে নারীদের ফিটনেস প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন কান্দিপাড়ার বাসিন্দা ফাতেমা রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে এখন পর্যন্ত কোনো আপত্তিকর ঘটনা ঘটেনি। এর কারণ হলো মুঠোফোনের ব্যবহারে খুব কড়াকড়িভাবে নজরদারিতে রাখা হয়। কাউকে ছবি তোলা বা ভিডিও করতে দেওয়া হয় না। শুধু কারও ফোন এলে তা রিসিভ করে ফোন রেখে দেওয়ার অনুমতি আছে। এমনকি আমি নিজেও ফোন ব্যবহার করি না। আমরা মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো আপস করিনি।’
শহরের দুটি ব্যায়ামাগারেই ব্যায়াম করেছেন সমাজকর্মী জেবিন ইসলাম বুধবারের ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে এর মানে এই নয় যে মেয়েরা ব্যায়ামাগারে যাওয়া ছেড়ে দেবেন। ব্যায়ামাগারে মেয়েদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মালিকদের এ বিষয়ে অনেক বেশি মনোযোগী হতে হবে। মেয়েদের ব্যায়ামের সময় অবশ্যই মুঠোফোনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। মেয়েদের ব্যায়ামের সময় নারী প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে তা পরিচালনা করতে হবে। মালিকদের পাশাপাশি মেয়েদেরও সাবধান থাকতে হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যায়ামাগারের পথিকৃৎ শেখ তৌফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ব্যায়ামাগারে মেয়েদের ব্যায়ামের সময় কোনো ছেলে প্রবেশ করতে পারে না। মুঠোফোনের ব্যবহারে কড়াকড়ি, ছবি ও ভিডিওতে নিষেধাজ্ঞা, নারী ফিটনেস প্রশিক্ষক দিয়ে পরিচালনা করছি। দেখা যায়, কোনো কোনো মেয়ে ব্যায়াম না করে কেবল ছবি ও ভিডিও করার জন্য আসেন। তাঁদের আমরা সদস্যপদ দিই না। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থই আমার কাছে মুখ্য। শুরু থেকেই আমার এখানে মেয়ে ফিটনেস প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন।’
শেখ তৌফিক আহমেদ আরও বলেন, যাঁরা জিম চালু করবেন, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ও প্রয়োজনে বদনাম যেন না হয়ে, সেদিক বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠান চালানো উচিত। প্রতিষ্ঠান চালানোর ক্ষেত্রে প্রত্যেক মালিককে কঠোর হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীমা সিকদার বলেন, একজন নারীকে হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করা একটি মেয়ের নিতান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। মেয়েদের ঘরে-বাইরে সমানভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুল্লাহ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গৃহবধূর পরিবার বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে কথা বলব। তাদের পরামর্শক্রমে ছাত্রলীগের ওই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’