তেলিগাতী নদীতে কুমির নিয়ে হুলুস্থুল

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার তেলিগাতী নদীতে কুমিরটিকে দেখতে প্রতিদিন উৎসুক জনতা ভিড় করে
ছবি: সংগৃহীত

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার তেলিগাতী নদীতে হঠাৎ একটি কুমির চলে আসে। প্রায় প্রতিদিনই কুমিরটিকে ওই নদীর কোনো না কোনো স্থানে ভেসে থাকতে দেখছেন এলাকাবাসী। এটা নিয়ে এলাকায় হুলুস্থুল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে কৌতূহলী মানুষ কুমির দেখতে ভিড় করছেন ওই নদীর তীরে।

প্রায় এক মাস ধরে ওই নদীর বিভিন্ন অংশে কুমিরটি দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নদীর ধারে চরে বেড়ানো অবস্থায় তিনটি ছাগল ধরে নিয়ে গেছে কুমিরটি। একদিন একটি মাছের ঘেরে গিয়েও আটকা পড়েছিল। পরে আবার সেটিকে নদীতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কুমিরটি যেন পর্যাপ্ত খাবার পায়, সে জন্য এলাকায় কোনো গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি মারা গেলে তা ফেলা হচ্ছে নদীতে।

এর আগে ওই নদীতে কোনো কুমির ছিল না। ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে কেউ কখনো কুমির দেখেনি। হঠাৎ সেই নদীতে কুমিরের আগমনে নদীর দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নদীতীরের লোকজন নদীতে নেমে গোসল করতে সাহস পাচ্ছেন না। মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন জেলেরা। নদীর তীরে ছাগল-গরুও কেউ বেঁধে রাখছেন না। সব মিলিয়ে ওই এলাকায় একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

গত রোববার দুপুরের দিকে কুমিরটি দেখা যাচ্ছিল শোভনা ইউনিয়নের শিবপুর কদমতলা খেয়াঘাটের কাছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকায় যাওয়ার পথেই দেখা যায় কুমির নিয়ে মানুষের আগ্রহ। ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার দূর থেকে মানুষ ইজিবাইক, ভ্যান, মোটরসাইকেল, সাইকেল নিয়ে ছুটছেন কুমির দেখতে। মানুষের মুখে মুখে কুমিরের গল্প। পথ চিনতে যে কারও কাছে কুমিরের কথা জিজ্ঞাসা করতেই দেখিয়ে দিচ্ছেন কোন পথে যেতে হবে কুমির দেখতে।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার তেলিখালী নদীতে হঠাৎ একটি কুমিরের আগমণ ঘটেছে। মাঝারি আকারের ওই কুমির দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন শত শত মানুষ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা

বিকেলের দিকে ওই এলাকায় পৌঁছে দেখা গেল নদীর ধারে মানুষের ভিড়। ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে প্রায় সব শ্রেণি–পেশার মানুষ রয়েছেন সেখানে। সড়কের ধারে মোটরসাইকেল রেখে নদীর কিনারের দিকে যেতেই ‘ওই, ওই যে…’ সমস্বরে আওয়াজ আসে কানে। তীরের কাছে যেতে যেতেই ডুব দেয় কুমির। কিছুক্ষণের মধ্যে অল্প সময়ের জন্য মাঝনদীতে কয়েকবার পানির ওপর শরীর ভাসিয়ে দেয় কুমিরটি। কুমিরটি মাঝারি আকারের। নদীটিও খুব বেশি বড় নয়। পাড়ের দিকে পানিতে একটি মরা ছাগল বেঁধে রাখা হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, একেক দিন একেক এলাকায় দেখা যায় কুমিরটিকে। জোয়ার-ভাটার মাঝামাঝি সময়ে বেশি দেখা যায়। কোথাও একবার কুমিরটি দেখা গেলে মুহূর্তেই সে খবর ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। এরপর বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে ভিড় করেন সেই এলাকায়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে থাকেন কুমিরটি একনজর দেখার জন্য।

খর্ণিয়া ইউনিয়নের পাঁচপুতা গ্রাম থেকে সাড়ে চার বছরের ছেলেকে কুমির দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন বাবুল সরদার। তিনি বলেন, আগের দিন বালুইঝাঁকি এলাকায় কুমিরটি দেখা গিয়েছিল। বাড়িতে গিয়ে সে গল্প করতেই ছেলে বায়না ধরেছে কুমির দেখবে, তাই নিয়ে এসেছেন।

প্রায় ৭০ ছুঁই ছুঁই বয়সের আয়েশা বেগমও ছিলেন কুমির দর্শনের দলে। তাঁর বাড়ি শিবপুর এলাকাতেই। তিনি বলেন, প্রতিদিন কমবেশি দেখা যায় কুমির। অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে মানুষ অপেক্ষা করেন কুমির দেখার জন্য।

তেলিখালী নদীর জিয়ালতলা ও শিবপুর গ্রামের আড়াই কিলোমিটারের মধ্যেই সাধারণত দেখা যাচ্ছে কুমিরটি। তেলিখালী নদীটি ঘ্যাংগরাইল হয়ে শিবসার সঙ্গে গিয়ে মিশেছে। শিবসা গিয়ে মিশেছে সুন্দরবন হয়ে বঙ্গোপসাগরে। ধারণা করা হচ্ছে শিবসা নদী থেকে কুমিরটি ওই নদীতে চলে এসেছে। কুমিরটিকে কেউ যেন বিরক্ত না করে, সেদিকটিও খেয়াল রাখা হচ্ছে।

সম্প্রতি বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনা কার্যালয়ের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকজন গিয়েছিলেন কুমিরটি দেখতে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে সুন্দরবন থেকে কুমিরটি ওই নদীতে চলে এসেছে। এখন স্থানীয় ব্যক্তিরা বিভিন্ন মরা গরু, ছাগল তার খাবার হিসেবে দিচ্ছেন, এ কারণে সে অন্য কোথাও যাচ্ছে না। যখন খাবার দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে, তখন কুমিরটি খাবারের খোঁজে লোকালয়ে চলে আসতে পারে। তাই এলাকার মানুষকে খাবার দিতে নিষেধ করা হয়েছে। খাবার না পেলে কুমিরটি আবার সুন্দরবনে ফিরে যেতে পারে।