ঘুষ চাওয়ার অডিও ফাঁস হওয়া চারঘাটের সেই ওসিকে সাময়িক বরখাস্ত, হবে বিভাগীয় মামলা

সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবুল আলম
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর চারঘাট মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রাজশাহী জেলা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে খুলনা রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হবে।

গত ১৯ অক্টোবর পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাজশাহী জেলার চারঘাট মডেল থানার ইনচার্জ, নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক মো. মাহবুবুল আলমকে বিভাগীয় নিয়ম–শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও অসদাচরণের দায়ে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর ১২(১) অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এতে আরও বলা হয়েছে, বরখাস্ত থাকাকালে মাহবুবুল আলম ডিআইজি খুলনা রেঞ্জের কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকবেন। বিধি অনুযায়ী তিনি খোরাকি ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্ত হবেন।

পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক) মো. আনিসুর রহমান আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহী জেলা পুলিশের তদন্ত শেষে পুলিশ সুপার তাঁর কাছে প্রতিবেদন দেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা পুলিশ সদর দপ্তরে সেই প্রতিবেদন পাঠান। এরপর এই আদেশ দেওয়া হয়েছে। ডিআইজি আরও বলেন, অভিযুক্ত মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।

এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পরিদর্শক মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন চারঘাটের সাহারা খাতুন (২৮) নামের এক নারী। এর সঙ্গে ঘুষ চাওয়ার ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের কথোপকথনের একটি রেকর্ডও সংযুক্ত করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ওসি মাহবুবুলকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

ফাঁস হওয়া ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের অডিওর একটি অংশে মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘এক মন্ত্রী (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) বাদে কারও কথা শুনতে এখানে আসি নাই।...এই লোকটা রাষ্ট্র। রাষ্ট্রকে সম্মান করি। মন্ত্রী মানেই রাষ্ট্র। আর মন্ত্রী অত্যন্ত ভদ্রলোক মানুষ। আমাকে নিয়ে আসছে সে। আমাকে গাইবান্ধা থেকে নিয়া আসছে। তাহলে আমি যদি খারাপ হই, তাহলে কষ্ট পাবে।’ একই অডিওতে ওই নারীর কাছ থেকে বিভিন্নভাবে সাত লাখ টাকা ঘুষ চাইতেও শোনা যায় মাহবুবুল আলমকে।

মাহবুবুল আলম তখন দাবি করেছিলেন, তাঁর কথোপকথন সম্পাদিত করা হয়েছে। অডিওর বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকার কোনো নিয়োগে আমি সুপারিশ করি না।’

এ ঘটনায় ১৭ সেপ্টেম্বর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার। ২ অক্টোবর রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির কাছে জমা পড়ে।