গ্রেপ্তার
গ্রেপ্তার

বরিশাল নগরে গ্রেপ্তার ৮২, আতঙ্কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাড়িছাড়া

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে বরিশাল নগরের বেশির ভাগ বিএনপির নেতা-কর্মী এখন বাড়িছাড়া। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বরিশাল নগরের সদর রোডে অশ্বিনীকুমার হল-সংলগ্ন এলাকায় মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয় বন্ধ। এরই মধ্যে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮২ জনকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার বিকেলে নগর বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, ১৯ জুলাই রাতে দেশব্যাপী কারফিউ জারির পর বরিশালে পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়। এতে বরিশাল মহানগর ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশ নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। ফলে গ্রেপ্তার এড়াতে সবাই যে যাঁর মতো আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেকে বন্ধ করে রেখেছেন মুঠোফোন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতে নগরের তিনটি থানায় নাশকতার অভিযোগে পাঁচটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নতুন করে নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত গ্রেপ্তার ব্যক্তির সংখ্যা ৮২। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেলের পরিদর্শক তানজীল আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে বরিশাল জেলার বানারীপাড়া থানা ও বাকেরগঞ্জ থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এই দুটি মামলায় বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত চারজনকে নতুন করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই দুটি মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ২৮ জনকে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৫ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত বরিশাল নগর ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ ২৮৯ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ সময় বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পুলিশ বক্স, চৌমাথা পুলিশ বক্স, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্পে হামলা ও ভাঙচুর হয়। এ ছাড়া দুটি মোটরসাইকেল, একটি পিকআপ ভ্যান, একটি ট্রাক ও ১০টি সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে। এসব ঘটনায় বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় দুটি, বন্দর থানায় একটি ও বিমানবন্দর থানায় নাশকতার অভিযোগে দুটি মামলা করে পুলিশ। এসব মামলায় ৭৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২ হাজার ৯৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল মহানগর বিএনপির এক নেতা বলেছেন, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান ওরফে লিংকন ও উত্তর জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সালাহ উদ্দীন ওরফে টিপলু, বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দীন সিকদার, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক নওশাদ নান্টু, ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব হানিফ হাওলাদার, ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. তছলিম, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল সিকদার, ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব সাইদুর রহমান ওরফে সবুজ ও শ্রমিক দলের মহানগর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আলী হোসেন আছেন।

১৯ জুলাই দুপুরে বরিশাল নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ওরফে ফারুক, সদস্যসচিব জিয়াউদ্দীন সিকদার, বিএনপির কর্মী মো. রিপনসহ ছয়জনকে কুপিয়ে  জখম করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথমে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ছেড়ে যান। এরপর তাঁরা কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি। তবে জিয়াউদ্দীন সিকদার ঢাকায় গিয়ে একটি বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়ার সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে মহানগর বিএনপির অপর এক নেতা জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার বরিশাল নগর বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে ফোন করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। বিকেলে নগরের সদর রোডের বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়গুলোতে তালা ঝুলছে। বৃহস্পতিবার সকালে নগরের রূপাতলী, নথুল্লাবাদ, সাগরদি, আমতলা মোড়, বটতলা ও বাংলা বাজার এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক দেখা যায়। কোথাও কোথাও যানজটও চোখে পড়ে। অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে। বাসগুলোতে যাত্রীর সংখ্যাও বেড়েছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, বরিশাল নগরের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। লোকজন ও যানবাহন চলাচল উভয় বেড়েছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দূর হয়ে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। মানুষের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক টহল দিচ্ছে। মানুষের নিরাপত্তায় যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, সবকিছুই নেওয়া হয়েছে।

বরিশাল জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনদীপ ঘরাই প্রথম আলোকে বলেন, বরিশালের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তাই বৃহস্পতিবার কারফিউ শিথিলের সময়সীমা আরও তিন ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে।