আজ মঙ্গলবার বেলা ১টা ১৮ মিনিটে পদ্মা সেতুর দিকে বিশেষ ট্রেন যাত্রা শুরু করে। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম পদ্মা সেতুসহ ৪২ কিলোমিটার রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। এরপর ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সাত বগির একটি ট্রেন ও রেল ট্র্যাকার যাত্রা শুরু করে। মন্ত্রীর সঙ্গে চিফ হুইপ নুর-ই-আলম লিটন চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হকসহ ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জের কয়েক সংসদ সদস্য ছিলেন। ছিলেন রেলওয়ে, পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের কর্মকর্তারাও।
ট্রেনের সাতটি বগির কামরা ও রেল ট্র্যাকারে তিন শতাধিক স্থানীয় মানুষ আরোহী হয়েছেন। তাঁদের একজন ফরিদপুরের ভাঙ্গার তুজারপুর গ্রামের গোলাম মাওলা (৭০)। ট্রেনে চড়ার জন্য আজ সকাল থেকে ভাঙ্গা স্টেশনে অপেক্ষা করেন তিনি। পরে দুপুরে তিনি রেল ট্র্যাকারে করে পদ্মা সেতুর দিকে যাত্রা করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘৫২ বছর আগে তরুণ বয়সে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় দেখেছি। স্বাধীন দেশে আমাদের আরেকটি বিজয় হলো আজ। গর্ববোধ করি এ জন্য যে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।’
পঞ্চগড়ের বাসিন্দা লিটন ইসলাম ২০১৯ সালে রেল লিংক প্রকল্পে কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কষ্টে-ঘামে পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। আজ খুব আনন্দিত, ট্রেনে চেপে পদ্মা পার হচ্ছি।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মী আসাদ মোল্যা দুই বছর ধরে কাজ করছেন রেল লিংক প্রকল্পে। তিনি বলেন, ‘স্বপ্নের সেতুতে কাজ করতে পারাটাই গর্বের। অনেক ভালো লাগছে। সফলভাবে পদ্মা সেতু আমরা পাড়ি দিতে পারছি।’
গোপালগঞ্জের মুকসেদপুরের মহারাজপুর গ্রামের শিহাব মিয়া ঢাকায় যাবেন। সড়কপথে ভাঙ্গায় আসার পর তিনি ট্রেনে চেপে বসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকায় যাওয়ার পথে শুনলাম, পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন মাওয়া যাবে। ট্রেনের প্রথম যাত্রী হওয়ার জন্য যাচ্ছি। খুব ভালো লাগছে। দ্বিতল সেতু। ওপর দিয়ে গাড়ি, তার নিচ দিয়ে ট্রেনে যাচ্ছি। অন্য রকম অনুভূতি। আমরা গর্বিত। কারণ, নিজের টাকায় এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’
ট্রেনটি ছুটতে শুরু করলে রেলপথের দুই পাশে দাঁড়িয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে জনতা। শিবচর স্টেশন, পদ্মা স্টেশনে কর্মরত কর্মী ও কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম ভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছানোর পর পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের (মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের) প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহম্মেদ মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নানা বিষয় সম্পর্কে জানান। এরপর মন্ত্রী ট্রেনে করে যাত্রা শুরু করেন।
ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষা, দেশের মানুষের স্বপ্ন আজ পূরণ হলো। আমরা সফলভাবে ট্রেন নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছি। এ বছরই পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেনে করে যাত্রীরা ভাঙ্গা-মাওয়া যাতায়াত করতে পারবেন।’