সাধারণ স্বাদের চা দিয়ে সাদাসিধে একটা দোকান চালু হয়েছিল। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নানা স্বাদের চা যুক্ত হয়েছে এই দোকানে। ধীরে ধীরে সাধারণ চায়ের সঙ্গে মালাই (দুধের সর), মালাইয়ের সঙ্গে অন্য উপাদানের স্বাদ যুক্ত করে বাড়ানো হয়েছে চায়ের নানা ধরন। একধরনের চা দিয়ে শুরু হয়ে সাত-আট বছরে এখন সেই চা-দোকানে চলছে ৯ ধরনের চা।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগরের ভেতরে ‘সুজন টি স্টল’ এখন অনেক চা-পিপাসুদের কাছে নানা স্বাদের চায়ের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে। দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শুধু চা-পান করতেই অনেকে এই চা-স্টলে ছুটে আসেন।
সুজন টি স্টলের সাইনবোর্ডের মধ্যে অনেক ধরনের চায়ের নাম। দোকানের মালিক নুরুল ইসলাম সুজনের বাড়ি শমসেরনগর উপজেলার মুন্সীবাজারের রামপুরে। দোকান থেকে বাড়ির দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। সেখান থেকে তিনি প্রতিদিন দোকানে আসা-যাওয়া করেন।
মালিক, সাইনবোর্ডে লেখা তালিকা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে জানা গেল, সুজন টি-স্টলে এখন ৯ ধরনের চা তৈরি হয়। চায়ের মধ্যে আছে ৭০ টাকা দামের স্পেশাল মালাই চা, ৫০ টাকার চকলেট মালাই চা, ৪০ টাকার হরলিক্স মালাই চা, ৪০ টাকার কফি মালাই চা, ৩০ টাকার রেগুলার মালাই চা, ১৫ টাকার কফি চা, ১০ টাকার রং চা, ১০ টাকার গ্রিন চা ও ১০ টাকার সাধারণ চা। স্টলটিতে চা ছাড়া আর কোনো ধরনের খাবার নেই। শুধু চা-পিপাসুদের জন্য স্টলটি সাজানো।
চা-দোকানি নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো সাজসজ্জা ছাড়াই সাদাসিধে দোকান শুরু করছি। নরমাল চা-ই ছিল। মালাই চায়ের চিন্তা ছিল না। নরমাল চা বানাইতে বানাইতে মনে অইলো এটা এ রকম করলে কিতা অয়। কোনটার সঙ্গে কোনটা মিশাইলে কেমন অয়। সবকিছু নিজে নিজে করছি। মানুষও পছন্দ করছে। আস্তে আস্তে জাত বাড়ছে।’
নুরুল ইসলাম বলেন, তিনি মৌলভীবাজার শহরের চার-পাঁচটি হোটেল-রেস্টুরেন্টে প্রায় আট বছর কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন। একপর্যায়ে ২০১৬ সালে শমসেরনগরের ভেতর বাজারে খোলেন এই চা-স্টল। খুব বেশি পুঁজির তাঁর দরকার পড়েনি। কোনো প্রকার সাজসজ্জা ছাড়াই দোকান চালু করেন। চার-পাঁচজনের বেশি বসার জায়গাও নেই দোকানটিতে।
এ সময় কাপ-পিরিচসহ তাঁর আনুষঙ্গিক খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার মতো। তাঁর মতে, চা-স্টল খুলতে বেশি টাকার দরকার পড়ে না। সকালে চা-পাতা, চিনি, দুধ কিনে আনলে বিকেলে বিক্রি করে মহাজনের ঋণ শোধ করা যায়। এভাবেই সাধারণ একটা চা দিয়ে সুজন টি-স্টলের যাত্রা শুরু হয়েছে। তারপর যত দিন গেছে, তাঁর চিন্তাভাবনায় যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন বিষয়। নিজে থেকেই চায়ের ধরন ও স্বাদ তৈরির চেষ্টা করেছেন। ভিড় বেড়েছে শৌখিন চা-পিপাসুদেরও। তবে তিনি মনে করেন, ‘নরমাল চা-টাই আসল চা। বাদবাকি আধুনিকতা।’
কোন চা কীভাবে বানান, সে বিষয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, সাধারণ চা ছাড়া আর সব চা-তেই মালাই যুক্ত করে আলাদা স্বাদ তৈরি করে থাকেন। এই মালাই-ই চায়ে নতুন স্বাদ আনে, বৈচিত্র্য আনে। যেমন স্পেশাল মালাই চা বানানো হয় দুধ, লিকার ও সরের মিশ্রণে। দুধ, লিকার ও মালাইয়ের সঙ্গে হরলিক্স মিশিয়ে তৈরি করা হয় হরলিক্স মালাই চা, চকলেট সিরাপ মিশিয়ে বানানো হয় চকলেট মালাই চা। চকলেট ও হরলিক্স মেশানোর কারণে অভিভাবকদের সঙ্গে আসা অনেক শিশুও এসব চা পছন্দ করে।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে নুরুল ইসলাম সুজনের দোকানে শুরু হয় চা তৈরির প্রস্তুতি। সব কটি উপাদান তৈরি করতে প্রায় ১২টা বেজে যায়। চা-পিপাসুরাও আস্তে আস্তে আসা শুরু করেন। এটা চলতে থাকে রাত ১২টা পর্যন্ত। নিয়মিত দুজন কর্মচারী আছেন। শীতকালে চা বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন চার-পাঁচজন কর্মচারী কাজ করেন। তবে দোকানে কর্মচারী থাকলেও চা-টা মূলত তিনিই তৈরি করেন। প্রতিদিন তাঁর দোকানে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার চা বিক্রি হয়। দোকানের সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার।