শীতের মধ্যে ভ্যান নিয়ে বের হয়েছেন এক চালক। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নওগাঁ পৌসভার জগৎসিংহপুর এলাকায়
শীতের মধ্যে ভ্যান নিয়ে বের হয়েছেন এক চালক। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নওগাঁ পৌসভার জগৎসিংহপুর এলাকায়

বদলগাছীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

নওগাঁর বদলগাছীতে আজ বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। হাড়–কাঁপানো শীতে বিপাকে পড়েছেন এ জনপদের মানুষ। সকালে কুয়াশার পরিমাণ কমে রোদের দেখা মিললেও উত্তরের হিমেল বাতাস অব্যাহত থাকায় শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে।

বদলগাছী আবাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল ৯টার দিকে বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বদলগাছীতে আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে দেখানো হয়েছে।

গতকাল বুধবার দিনভর সূর্যের দেখা না মিললেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় তাপমাত্রা কমেছে ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসায় আগামী তিন থেকে চার দিন তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি উত্তর থেকে আসা হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় নওগাঁয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। শীতের কারণে নিম্ন আয়ের লোকজন পড়েছেন বিপাকে। আজ সকালে নওগাঁ শহরের বিজিবি ব্রিজ এলাকায় কথা হয় ভ্যানচালক আবদুল মালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল সকাল রোদ উঠিছে। কিন্তুক কনকনা বাতাসের কারণে খুব ঠান্ডা লাগোছে। ঠান্ডাত হাত-পা জড়ো হয়ে যাওছে। এমন ঠান্ডাত ল্যাপ গাওত দিয়ে শুয়ে থাকলে ভালো লাগত। কিন্তু প্যাটত খিদা থাকলে কি আর বাড়িত আরামে থাকা যায়?’

শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নওগাঁ জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৭৫টি শিশু ভর্তি ছিল। কয়েক দিনে সর্দি, জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শয্যাসংকটের কারণে কোনো কোনো বেডে দুটি শিশু রাখা হয়েছে। অনেক রোগীকে ওয়ার্ড ও করিডরের মেঝেতে জায়গা দিতে হয়েছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল ইসলাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। শিশু ও বয়স্কদের ঘরের বাইরে বের না হওয়া, বাসি ও ঠান্ডা খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

হাড়–কাঁপানো শীতের সকালে গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে লোকজন কাজে বের হয়েছেন। আজ সকাল পৌনে ৯টায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার শিংপাড়া এলাকায়

পঞ্চগড়ে আবারও বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ
দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে আবারও এক দিন বিরতির পর বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। হাড়–কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কুয়াশা কম থাকলেও হিমেল বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৮৩ শতাংশ; বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার।

এর আগে গতকাল তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল যশোরে।

আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালে হালকা কুয়াশার সঙ্গে বইছে উত্তরের হিমেল বাতাস। সকালের কনকনে শীতের মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছেন কাজের সন্ধানে। তবে সকাল ৯টার পর দেখা মেলে মিষ্টি রোদের।

গত শুক্র থেকে রোববার পর্যন্ত টানা তিন দিন উত্তরের এই জনপদে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। এই তিন দিন তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি থেকে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে। তবে এ সময়ে কুয়াশার পরিমাণ কমে গিয়ে প্রায় প্রতিদিনই দিনের বেলা ওঠে ঝলমলে রোদ।

আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালে হালকা কুয়াশার সঙ্গে বইছে উত্তরের হিমেল বাতাস। সকালের কনকনে শীতের মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছেন কাজের সন্ধানে। তবে সকাল ৯টার পর দেখা মেলে মিষ্টি রোদের। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

সকাল পৌনে নয়টায় সদর উপজেলার শিংপাড়া এলাকায় কথা হয় ভ্যানচালক দবিরুল ইসলামের (৪৩) সঙ্গে। তিবি বলেন, ‘সারা রাইত কুহাকাপ ঠান্ডা। বিছানাখানো যেইপাখে (যেপাশে) উল্টেছু, ওইপাখোতে ঠান্ডা। মনডা কহচে বিছানা খানোত পানি ঢালে দিছে। এ্যাল (এখন) সকালে ভ্যান নিয়া বাইর হনু (হলাম), তাহাও (তবুও) ঠান্ডা।’

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এক দিন বিরতির পর আবারও তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। তবে সকাল সকাল রোদের দেখা মিলেছে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দিনের বেলা রোদ থাকায় জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি থাকবে।