ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বাঁশাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চন্দ্র চন্দকে নিজের প্রাইভেট কারে গলা টিপে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ উজ্জ্বল চন্দ্রের ব্যক্তিগত গাড়ির চালকসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সঙ্গে থাকা ১১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই এই হত্যার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১১টার দিকে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের মুক্তাগাছার বলের সড়ক নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। ইউপি চেয়ারম্যানকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে আজ শুক্রবার বিকেলে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। এ ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চন্দ্রের ভাই রাজীব চন্দ্র বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উজ্জ্বল চন্দ্র চন্দ তাঁর অটোরাইস মিলের চাল বিক্রির টাকা আনতে গতকাল ময়মনসিংহে যান। এরপর প্রায় ১১ লাখ টাকা নিয়ে তিনি প্রাইভেট কারে করে মুক্তাগাছায় ফিরছিলেন। ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের মনতলা সেতু পার হতেই চালক গাড়িটি রহস্যজনকভাবে চালাতে থাকেন। একপর্যায়ে গাড়ির পেছনের সিটে আগে থেকে লুকিয়ে থাকা দুই ছিনতাইকারী উজ্জ্বল চন্দ্রের গলা চেপে ধরে। নিজেকে রক্ষা করতে চেয়ারম্যান একজনের হাতের আঙুলে কামড় দেন। এতে ওই ছিনতাইকারী দমে গেলেও অপর ছিনতাইকারীর সঙ্গে গাড়িতেই ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে চালক গাড়িটি সড়কের পাশের খাদে নামিয়ে দেন। সড়ক দুর্ঘটনা মনে করে পথচারীরা ঘটনাস্থলে ছুটে এলে এক ছিনতাইকারী পালিয়ে যায়। তবে গাড়ির চালক আবদুল মতিন (২৩) ও ছিনতাইকারী সুজন মিয়াকে (২৪) আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয় লোকজন।
গাড়িচালক আবদুল মতিন উপজেলার মনিরামবাড়ী এলাকার বাসিন্দা। সুজন মিয়া শেরপুর জেলার পাকুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক আহম্মেদ বলেন, ছিনতাইকারীরা ময়মনসিংহের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করত। ইউপি চেয়ারম্যানের গাড়িচালকের সঙ্গে তাদের আগে থেকেই সখ্য ছিল। টাকা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে আগে থেকেই চালকের সহযোগিতায় গাড়িতে লুকিয়ে ছিল দুজন। একজন পালিয়ে গেলেও অন্যজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চন্দ্র চন্দ বলেন, তাঁর গাড়িচালকের সহযোগিতায় আগে থেকেই পেছনের সিটে দুজন ছিনতাইকারী লুকিয়ে ছিল। মাঝপথে তিনি বিষয়টি টের পান। পরে পথচারীদের সহযোগিতায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তাঁর সঙ্গে থাকা চাল বিক্রির সাড়ে ১১ লাখ টাকা ছিনতাই করতেই ঘটনাটি ঘটানো হয় বলে তিনি ধারণা করছেন। তবে ছিনতাইকারীরা টাকা নিতে পারেনি।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বিকেল চারটার দিকে মুক্তাগাছা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন ইউপি চেয়ারম্যানের অনুসারীরা। পরে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। এতে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ইছাহাক আলী সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নয়ন কুমার দে, সিদ্দিকুজ্জামান সিদ্দিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম মন্ডল, বোরহান উদ্দিন আকন্দ ও মর্জিনা আক্তার বক্তব্য দেন। বিক্ষোভকারীরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
মুক্তাগাছা থানার ওসি ফারুক আহম্মেদ বলেন, এ ঘটনায় করা মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আজ বিকেলে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। তবে রিমান্ড শুনানি না হওয়ায় আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।