হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে আজ রোববার বিকেলে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার জের ধরে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তাঁরা হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আবু জাহিরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে আন্দোলনকারীরা বাসাটি ঘিরে ফেলেন।
বিকেলে সাড়ে পাঁচটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে বাসা থেকে গুলি ছোড়া হয়। বাসার দিকেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। এতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত গুলিবিদ্ধ সাতজন হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সরেজমিন দেখা গেছে, রোববার দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সামনে জড়ো হন। বেলা যত বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। প্রায় দুই ঘণ্টা বৃন্দাবন কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থানের পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শহরের কোর্ট মসজিদ এলাকায় পুনরায় জড়ো হন। বেলা আড়াইটার দিকে তাঁরা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়কের উত্তর দিকে চৌধুরী বাজার অভিমুখে রওনা হন।
এদিকে শহরের পৌর টাউন হলের সামনে আজ বেলা ১১টা থেকে অবস্থান নেন জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। এ সময় তাঁদের লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সমবেত হতে দেখা যায়। সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হবিগঞ্জ সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির, দলের সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর চৌধুরীসহ দুই থেকে তিন শ নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকেন। গুলিতে ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন। রণি (২৩), সায়েমসহ (২৬) পাঁচ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যান। পরে আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দিলে তাঁরা এমপি আবু জাহিরের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর আন্দোলনকারীরা বাসাটি ঘিরে ফেলেন। এ সময় তাঁদের লক্ষ্য করে বাসার ভেতর থেকে গুলি ছোড়া হয়। বাসার দিকেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। এতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়কের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকা অতিক্রমকালে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের লোকজন তাঁদের উদ্দেশ্য করে গুলি চালান। এতে তাৎক্ষণিক অর্ধশত আহত হন বলে এই ছাত্ররা দাবি করেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত শুক্রবার আওয়ামী লীগ অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দলের সভাপতির বাসায় হামলা হয়। আজ আবার তারা হামলা করবে, এমন খবরে আমরা টাউন হলে জড়ো হই। আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য জড়ো হই।’ তাঁদের অবস্থান থেকে গুলি চালানোর বিষয়ে ওই নেতা কোনো মন্তব্য করেননি।