রমজান এলে কুমিল্লা নগরের বিভিন্ন হোটেলে তৈরি করা হয় নানা স্বাদের ইফতার। ছবিটি শনিবারের
রমজান এলে কুমিল্লা নগরের বিভিন্ন হোটেলে তৈরি করা হয় নানা স্বাদের ইফতার। ছবিটি শনিবারের

কুমিল্লায় রুচির পরিবর্তন বৈচিত্র্য এনেছে ইফতারে

কুমিল্লা অঞ্চলে একসময় দই, চিড়া, কলা, খই ও মুড়ি দিয়ে ইফতার হতো। এরপর ইফতারে পাতে এল ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, মুড়ি ও মোটা জিলাপি। রুচির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইফতারেও আসছে নানা বৈচিত্র্য। এখন মানুষ ইফতারে মুরগি, গরু, খাসির মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন মুখরোচক খাবার পছন্দ করেন।

নগরের কান্দিরপাড়ে জিলা স্কুল সড়ক লাগোয়া বধূয়া ফুড ভিলেজ, ঝাউতলা এলাকার দ্য অ্যালিট প্যালেস, জেনিস সুইটস, কুমিল্লা ক্লাব, রাজগঞ্জের ডায়না হোটেল, রেসকোর্সের রেড রুফ ইন, রাজগঞ্জের ক্যাপসিকাম, এবি ফুডসে ঘুরে পছন্দের ইফতার কিনতে দেখা গেছে শত শত ক্রেতাকে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, সোনালি মুরগি, গরু ও খাসির মাংস, তেল, চিনি ও ফলের দাম বাড়ার কারণে ইফতারির দামও গতবারের তুলনায় বেড়েছে।

বধূয়া ফুড ভিলেজের স্বত্বাধিকারী ফুয়াদ আহমেদ বলেন, এখানকার আফগানি দুরুসের চাহিদা বেশি। সোনালি একটি মুরগির ভেতরে বিভিন্ন ধরনের মসল্লা দিয়ে ওই খাবার তৈরি করা হয়। এতে টক, ঝাল, মিষ্টি তিন ধরনের স্বাদ পাওয়া যায়। প্রতিটির দাম ৪৫০ টাকা। খাসির পা মসল্লা দিয়ে রান্না করা হয়। প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা করে।

এখানে তাওয়া ঝালফ্রাই পাওয়া যায়। তিন টুকরা চিকেন ভুনা করে মুখরোচক মসলা দিয়ে তাওয়া ঝালফ্রাই বানানো হয়। পরে সেটি মাটির পাতিলে রাখা হয়। দাম ২২০ টাকা। আস্ত ব্রয়লার মুরগির ভেতর খালি করে এর ভেতরে সেদ্ধ ভুনা ডিম ঢুকিয়ে দিয়ে খাঁচি কাবাব তৈরি করা হয়। দাম ৩৫০ টাকা। তাদের এখানে অন্তত ১০০ ধরনের ইফতার বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি তাঁর।

কুমিল্লা নগরের লাকসাম সড়ক এলাকার বাসিন্দা মিনহাজ রহমান বলেন, ‘বধূয়ার মাংসের পদের সব ইফতারি আমার পরিবারের সদস্যদের পছন্দ। ভিন্ন স্বাদের এসব খাবার বাচ্চারা ভীষণ পছন্দ করে।’

ডায়না হোটেলের খাসির হালিমের চাহিদা গত তিন দশকের। ওই হালিমের কেজি ৪৫০ টাকা করে। ডায়না হোটেলের অন্যতম ব্যবস্থাপক মো. সোহেল বলেন, গতবারের চেয়ে এবার খাসির হালিমের দাম বেড়েছে।

স্থানীয় ইতিহাসবিদ আহসানুল কবীর বলেন, ‘কুমিল্লা প্রাচীনকাল থেকে অগ্রসরমাণ। এখানকার মানুষ অতিথি আপ্যায়ন করে আনন্দ পান। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখানে ইফতারি হয়। মাংসভোজীর সংখ্যা এখানে বেশি। যে কারণে গরু, মুরগি ও খাসির তৈরি খাবারের প্রতি চাহিদা বেশি। কমবেশি সবাই এই ধরনের খাবার পছন্দ করে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ায় রুচিতে পরিবর্তন হচ্ছে। যে কারণে ইফতারিতে প্রতিনিয়ত বৈচিত্র্য আসছে।’