সিলেটের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি। আজ সোমবার বেলা একটার দিকে নগরের চৌহাট্টা এলাকায়
সিলেটের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি। আজ সোমবার বেলা একটার দিকে নগরের চৌহাট্টা এলাকায়

সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

বকেয়া বেতন ও চাকরি নিয়মিতকরণের দাবিতে ‘কর্মকর্তা–কর্মচারীদের’ অবরোধ

বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও চাকরি নিয়মিতকরণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন সিলেটের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। আজ সোমবার বেলা একটার দিকে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় ‘বৈষম্যবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীর’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত কর্মসূচি চলাকালে নগরের চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। পরে আন্দোলনকারীরা ‘লংমার্চ’ করে সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যান। সেখানে বেলা আড়াইটার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাঁচ সদস্যের একটি দলের বৈঠক হয়। জেলা প্রশাসক বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে আশ্বস্ত করলে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।

আন্দোলনকারীরা জানান, প্রায় দুই বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে পারছেন না। উপাচার্যের কাছে গিয়েও তাঁরা এ বিষয়ে সুরাহা পাননি। এ জন্য তাঁরা ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে উপাচার্য এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, রেজিস্ট্রার আবুল কালাম মো. ফজলুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ মো. শাহ আলমের পদত্যাগ চেয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কক্ষ তালাবদ্ধ করে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন শুরু করেন।

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে পদত্যাগ ছাড়াই গা ঢাকা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এনায়েত হোসেন। বিনা ছুটিতে তিনি প্রায় দুই মাস ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত আছেন। আন্দোলনের মুখে সম্প্রতি রেজিস্ট্রার পদত্যাগ করেছেন। কোষাধ্যক্ষও অনুপস্থিত রয়েছেন। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচি চলাকালে সিলেট নগরের চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীর সময়ে ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ২২০ জনকে ছয় মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে (অ্যাডহক) নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে মেয়াদ অনূর্ধ্ব ছয় মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্ধারিত সময় পূর্ণ হওয়ার পর তাঁদের চাকরি নিয়মিত না করে উপাচার্য নিজ ক্ষমতায় একাধিকবার তাঁদের অ্যাডহকে নিয়োগ দেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদিত পদ ছিল ১১২টি। এ অবস্থায় ইউজিসি অস্থায়ীভাবে আর কোনো নিয়োগ না দেওয়া এবং যেসব পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের চাকরির মেয়াদ আর না বাড়ানোর সুপারিশ করে।
মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীর স্থলাভিষিক্ত হয়ে উপাচার্য এনায়েত হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেই অ্যাডহকে নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ছাড়া অন্য সবার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন। একাধিকবার তাঁরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানালেও ইউজিসির সুপারিশের দোহাই দিয়ে উপাচার্য তাঁদের চাকরি স্থায়ী করেননি।

এদিকে গতকাল রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কামরুন নাহার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস দুষ্কৃতকারীরা তালাবদ্ধ করে রাখায় উপাচার্য, পরিচালক, রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে প্রবেশ করতে পারছেন না। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণসহ অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্পের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উপাচার্যের অস্থায়ী কার্যালয়ের ফটকসহ কার্যালয়ের কক্ষগুলো দুষ্কৃতকারীদের কবল থেকে দখলমুক্ত করে প্রশাসনিক এবং একাডেমিক সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।