গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে তিনটি হিমালয়ান প্রজাতির শকুন উদ্ধার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন তীর (টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ) গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখার সদস্যরা আজ শুক্রবার সকালে শকুন তিনটি উদ্ধার করেন।
সংগঠনটির সদস্যরা জানিয়েছেন, শকুনের একটি বড় ঝাঁক গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কঞ্চিবাড়ী ও চণ্ডীপুর এলাকায় দেখা যায়। শকুনগুলো তাদের ১২ ফুট দৈর্ঘ্যের ডানায় ভর করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছিল। ফলে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসা এসব শকুন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে কয়েকটি শকুন ক্লান্ত হয়ে খাবারের খোঁজে ও বিশ্রামের জন্য গাছের মগডালে বসে, কয়েকটি মাটিতে নেমে আসে। এর মধ্যে তিনটি শকুনকে স্থানীয় লোকজন ধরে ফেলেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীরের গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখার সদস্যরা গতকাল রাতে কঞ্চিবাড়ী থেকে একটি এবং আজ শুক্রবার সকালে চণ্ডীপুর এলাকা থেকে দুটি শকুন উদ্ধার করেন।
এ বিষয়ে তীরের গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি জাহিদ রায়হান বলেন, তীরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রিফাত হাসানের পরামর্শে শকুনগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি এলাকায় সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য শকুন তিনটিকে শুক্রবার বিকেলে বন বিভাগের রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে এগুলোকে দিনাজপুর সিংড়া জাতীয় উদ্যানের শকুন পরিচর্যাকেন্দ্রে পাঠানো হবে।
তীরের উপদেষ্টা ও গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান বলেন, শকুন হচ্ছে প্রকৃতির ঝাড়ুদার। শকুন বড় ডানার বৃহদাকার পাখি, এটি তীক্ষ্ণ দৃষ্টির অধিকারী ও মৃত প্রাণী ভক্ষণকারী পাখি। শকুনই একমাত্র প্রাণী, যারা রোগাক্রান্ত মৃত প্রাণী খেয়ে হজম করতে পারে এবং অ্যানথ্রাক্স, যক্ষ্মা, খুরারোগের সংক্রমণ থেকে জীবজগৎকে রক্ষা করে।
প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন শকুনকে মহাবিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। শকুনমাত্রই এখন বিপন্ন। পরিবেশবিদেরা বহু আগেই শকুনকে প্রকৃতির ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে শকুন। অন্তত ৪০টি রোগের ঝুঁকি থেকে মানুষকে রক্ষা করে এই পাখি। মরদেহ থেকে যেসব জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে, তা থেকে মানুষকে রক্ষা করে শকুন। এখন শকুনও কমে গেছে, একই সঙ্গে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার হারও বেড়ে গেছে।
শকুনসহ সব বন্য প্রাণী সংরক্ষণে ২০১১ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠন তীর। বন্য প্রাণী সংরক্ষণে ভূমিকার জন্য সংগঠনটি এ বিষয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পদক ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড কনজারভেশন ২০২১’-এ ভূষিত হয়।