এনামুর রহমানের বিরুদ্ধে মাঠে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং ও আশুলিয়া আওয়ামী লীগের নেতা মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং ওরফে মুরাদ ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের কারণে দুইবারের এই সংসদ সদস্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়েছেন।
ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদ। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মালেক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেছ হোসেন অংশ নেওয়ায় তিনিও বেশ চাপে আছেন।
এনামুর রহমানের নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে জড়িত তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এনামুর রহমান একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ। ৩০-৪০ বছর ধরে সভারবাসীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ঝুট ব্যবসা, জায়গা দখল—এমন কোনো প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকাণ্ডে কখনোই তাঁর মদদের অভিযোগ ওঠেনি। দল–মত নির্বিশেষে সবাই তাঁকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবেই জানেন–চেনেন। এসব কারণে তিনি ভোটে নির্বাচিত হবেন।’
ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবির বলেন, জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন একজন স্বচ্ছ, যোগ্য ও দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি—এটিই সবার প্রত্যাশা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে একজন সাবেক সংসদ সদস্য, একজন উপজেলা চেয়ারম্যান আছেন। তাঁদের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা সবার দেখার সুযোগ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তিনজনের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা সবার তুলনা করা সুযোগ তৈরি হয়েছে। সচেতন ভোটারদের সমর্থন বেনজীর আহমদের পক্ষে।
স্থানীয় ভোটাররা পারিবারিক পরিচিতি, সাবেক আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও বেশ কয়েকটি ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং ওরফে মুরাদকে নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে দেখছেন।
সাভার পৌর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও তৌহিদ জংয়ের সাভার পৌরসভার ৭৩টি কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ১০ বছরে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের একজন কর্মীও তৈরি করতে পারেননি। উল্টো দলের পরীক্ষিত কর্মীরা যাঁদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, তাঁদের দলীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলে এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে রাজনীতিতে এসেছেন মুরাদ জং। সব দিক বিবেচনায় তাঁর জন্যই কাজ করছেন সবাই। ভোটাররা তাঁকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামও আছেন শক্ত অবস্থানে। তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে স্বনির্ভর ধামসোনা ইউপির চেয়্যারম্যানের পদে একাধারে ৭ বছর দায়িত্ব পালন করে পদত্যাগ করেছেন। ওই ইউনিয়নের উন্নয়নের কারণে এবং আশুলিয়ার শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক থাকায় সাভারের শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতাকে ভোটের মাঠে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভোটের হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পাথালিয়া ও ইয়ারপুর ইউপির চেয়াম্যানেরা তাঁকে সমর্থন দিচ্ছেন।
গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সরোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা হলেই সাইফুল ইসলাম দ্রুত সমাধান করেন। করোনার সময় শ্রমিকদের পাশে ছিলেন। শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা, কবরস্থানের দাবিটিও তিনি কয়েক মাস আগে রক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন।
ঢাকা-২০ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বেনজীর আহমদের সঙ্গে নির্বাচনের মাঠে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মালেক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেছ হোসেন।
ধামরাই পৗর যুব লীগের সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, সাদামাটা জীবনযাপন করেন মোহাদ্দেস হোসেন। গ্রামের বাড়িতে ভাইয়েরা থাকেন। সেখানে নিজস্ব কোন ঘর নেই তাঁর। তিনি ধামরাইয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। সবাইকে নিজের সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন। সব দলের বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মানসহ কর্মীদের মূল্যায়নের কারণে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
ধামরাই উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এম এ মালেক সাবেক সংসদ সদস্য। তাঁর সময়ে ধামরাইয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে। তাঁর জনপ্রিয়তা রয়েছে। এসব বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে ধামরাইবাসী তাঁকেই নির্বাচিত করবেন।