বন্যায় নলকূপ ডুবে যাওয়ায় গৃহবধূ সাহেরা বেগম কলসি নিয়ে বিশুদ্ধ পানি আনতে যাচ্ছেন। আজ দুপুরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ভাটি বোচাগাড়ি গ্রামে
বন্যায় নলকূপ ডুবে যাওয়ায় গৃহবধূ সাহেরা বেগম কলসি নিয়ে বিশুদ্ধ পানি আনতে যাচ্ছেন। আজ দুপুরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ভাটি বোচাগাড়ি গ্রামে

‘চারপাকে এত পানি, তা–ও খাবার পানি নাই’

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ভাটি বোচাগাড়ি গ্রামের গৃহবধূ সাহেরা বেগম (৪৫)। বাড়ির আঙিনায় হাঁটুপানি। আট দিন ধরে পানির মধ্যে বাড়িতেই আছেন। পাড়ার একমাত্র নলকূপটি ডুবে গেছে। আজ সোমবার দুপুরে কলসি নিয়ে বিশুদ্ধ পানি আনতে যাচ্ছিলেন। সাহেরা বেগম বলেন, ‘হামার ঘরে চারপাকে এত পানি, তা–ও খাবার পানি নাই। পাড়াত অ্যাকনা টিউকল (নলকূপ) আচিলো। বানের পানিত তা ডুবি গ্যাচে। এক মাইল দূরে পাশের উচে গাও (আশ্রয়কেন্দ্র) থাকি খাবার পানি আনা নাগে। যাবার সমায় কোমরপানি ভাঙ্গি যাই।’

গৃহবধূ সাহেরার মতো ভাটি বোচাগাড়িসহ সুন্দরগঞ্জের কাপাসিয়া ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটের কথা জানালেন।

এদিকে গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি কমছে। কিন্তু ধীরগতিতে। তিস্তা নদীবেষ্টিত কাপাসিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি ডুবে আছে। বাড়ির আঙিনা হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত। অগভীর নলকূপ ডুবে গেছে। ফলে বন্যাকবলিত চর এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে নদীর পানি পান করে নানা সমস্যায় ভুগছেন।

আজ দুপুরে সরেজমিনে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি ডুবে আছে। অনেক টিনের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বিশেষত চরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সংকট বেশি। অনেকে কোমরপানি ভেঙে, অনেকে নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় দূর থেকে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সংগ্রহ করছেন।

কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনজু মিয়া মুঠোফোনে বলেন, পানি কমছে, তবে ধীরে ধীরে। চরাঞ্চলে সব নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ওই সব এলাকায় পানি ফুটিয়ে খেতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। তারাও কাজ করছে।

বন্যায় নলকূপ ডুবে গেছে। আজ দুপুরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের পোড়ারচর গ্রামে

এবারের বন্যায় সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা—এই চার উপজেলার চরাঞ্চলে কী পরিমাণ নলকূপ ডুবে গেছে, তা জানা যায়নি। এসব বিষয়ে গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়হান আলী প্রথম আলোকে বলেন, এবার বন্যাকবলিত চারটি উপজেলায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নয়টি অগভীর নলকূপ ও ১২টি শৌচাগার স্থাপন করা হয়েছে। ৩ লাখ ৩৩ হাজার ১০০টি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১১ হাজার ২২৩টি জারিকেন, ২ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন চারটি ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট দ্বারা বাঁধে আশ্রয় নেওয়া জনগণকে পানি বিশুদ্ধ করে সরবরাহ করা হচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গাইবান্ধার চারটি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় পাঁচটি, সুন্দরগঞ্জে সাতটি, সাঘাটায় আটটি ও ফুলছড়িতে সাতটি। এসব ইউনিয়নের মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৭১২ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলায় ১৮১টি স্থায়ী অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

নদ-নদীর পানি কমছে

গাইবান্ধায় ধীরগতিতে নদ-নদীর পানি কমছে। আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও তিস্তা নদীর পানি হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে করতোয়ার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘটের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। অন্য সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ বেলা তিনটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার, ঘাঘটের পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন কাউনিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে চরাঞ্চল থেকে পানি নামতে সময় লাগবে। তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘটের পানি বিপৎসীমার ওপরে এবং করতোয়া ও তিস্তার পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।