নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণা করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। ৩১ সদস্যের এ কমিটিতে প্রধান হিসেবে রাখা হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে।
গতকাল সোমবার রাতে প্রধান নির্বাচনী কার্যলয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কমিটি ঘোষণা করেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। দলীয় মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে বরিশাল আওয়ামী লীগ নেতাদের যে দূরত্ব চলছে, এ কমিটির মাধ্যমে তা ঘোচার আশা করছেন অনেকে। তবে রাজনীতি পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, এ উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে উভয় পক্ষের পারস্পরিক আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার ওপর।
ঘোষিত ৩১ সদস্যের ওই উপদেষ্টা কমিটিতে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে প্রধান করা করা হলেও কমিটিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর এবং সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে রাখা হয়নি। তাঁদের না রাখার কারণ ব্যাখ্যা করে সংবাদ সম্মেলনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে মেয়র পদে রয়েছেন। এ জন্য তাঁদের কমিটিতে রাখা হয়নি।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল ১৬ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি ঘোষণা করেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। ওই কমিটিতে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, তাঁর ছেলে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ তাঁদের অনুসারী কেউ নেই।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের জন্য একক প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল। কিন্তু মনোনয়ন পেয়েছেন তাঁর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। এতে সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী নেতা-কর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এ জন্য দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গত ২৫ দিনেও তাঁদের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে দেখা যায়নি। অতীতে দলীয় পদে থেকেও কোণঠাসা ছিলেন এবং দল থেকে ছিটকে পড়া সাবেক নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। এমন অবস্থায় দলের কেন্দ্রীয়, স্থানীয় নেতাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি ঘোষণা করলেন তিনি।
কমিটিতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী, মাহাবুব উদ্দিন আহেম্মদ বীর বিক্রম, বরিশার সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা আফরোজ, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুর রহমানসহ ১৪ দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছেন।
উপদেষ্টা কমিটি নিয়ে নগর এবং জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক অন্তত ছয়জন নেতার সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা সবাই এমন উদ্যোগকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন। নেতারা বলেছেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয় করতে এ উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে। বিশেষ করে দলের মধ্যে যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল, বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে প্রধান উপদেষ্টা করার ফলে তা অনেকটা নিরসন হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। কারণ, আমি আগেই বলেছিলাম, আমাদের বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে যত দ্রুত সম্ভব বরিশালে আনার ব্যবস্থা করা উচিত প্রার্থী আবুর খায়েরের। তাঁকে নির্বাচনী কাজে যত দ্রুত সম্পৃক্ত করা যাবে, তত দ্রুত ঐক্য ফিরে আসবে দলে। কারণ, তিনি দলটাকে সব থেকে ভালোভাবে চেনেন, জানেন। দেরিতে হলেও এটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এবং এটা আরও আগে নেওযা উচিত ছিল।’
তবে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে দলের মধ্যে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, তা খুব সহজে ঘুচবে—এমনটা আশা করা দুষ্কর বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। তাঁরা বলেছেন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে প্রধান উপদেষ্টা পদ দেওয়াটা অবশ্যই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তবে তা কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে উভয় পক্ষের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার ওপর।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীরকে উপদেষ্টা কমিটিতে না রাখায় এ বিভেদ দীর্ঘ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে মনে হয়। এ জন্য তাঁদেরও এ কমিটিতে অর্ন্তভুক্ত করা উচিত। কেননা, তাঁরা দুজনই মহানগর কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
বরিশালের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগে কোনো বিভেদ নেই উল্লেখ করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, উপদেষ্টা কমিটির কথা নানা মাধ্যমে শুনেছেন। তবে এটা বলতে চান, আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ তাঁদের রাজনেতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছোট ভাই। তাই এখানে বিভেদ থাকার প্রশ্নই ওঠে না। যাঁরা এসব মুখরোচক কথা বলেন, তাঁরা কোনো না কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে বলেন।’
তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘আমরা অচিরেই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ যৌথ বর্ধিত সভা করব। সেখানে প্রার্থীও থাকবেন। আমরা সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামব।’ এ কে এম জাহাঙ্গীর ও সাদিক আবদুল্লাহকে উপদেষ্টা কমিটিতে না রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা একান্তই প্রার্থীর ব্যক্তিগত বিষয়। তাই এ নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।’