খুলনার কয়রা উপজেলার আওতাধীন সুন্দরবনের ঝপঝপিয়া নদী দিয়ে চলছে ভারত থেকে আসা মালবাহী লাইটার জাহাজ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা
খুলনার কয়রা উপজেলার আওতাধীন সুন্দরবনের ঝপঝপিয়া নদী দিয়ে চলছে ভারত থেকে আসা মালবাহী লাইটার জাহাজ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা

সুন্দরবনে জাহাজের ধাক্কায় নৌকাডুবি, নিখোঁজ জেলের সন্ধান নেই

সুন্দরবনের ভেতরে মালবাহী লাইটার জাহাজের ধাক্কায় নৌকা ডুবে কাঁকড়া আহরণকারী এক জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। সোমবার গভীর রাতে সুন্দরবনের বজবজা টহল ফাঁড়ির আওতাধীন ঝপঝপিয়া নদীতে এ ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত বন বিভাগ ও নৌ পুলিশের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও নিখোঁজ জেলের সন্ধান পাননি।

নিখোঁজ জেলের নাম নুরুল ইসলাম (৪৮)। তিনি খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের শেখ সরদারপাড়া গ্রামের জব্বার শেখের ছেলে। তাঁর সঙ্গে থাকা আরেক জেলে জাকির হোসেন সাঁতরে নদীর তীরে উঠে এলে তাঁকে উদ্ধার করে লোকালয়ে পৌঁছে দিয়েছে বন বিভাগ।

গত ২১ নভেম্বর সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ স্টেশন থেকে কাঁকড়া ধরার অনুমতি নিয়ে নদীতে যান নুরুল ইসলাম। কাঁকড়া ধরা শেষে ফেরার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন তাঁরা।

আজ সকালে সুন্দরবনের বজবজা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার গভীর রাতে মালবাহী জাহাজের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে জেলেদের নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকায় দুজন জেলের একজন উদ্ধার হলেও আরেক জেলে এখনো নিখোঁজ। আমরা তল্লাশি অভিযান চলাচ্ছি।’

জানা গেছে, নৌপথে বাণিজ্য সম্প্রসারণে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’ স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌপথ ব্যবহার করে প্রতি মাসে কয়েক শ পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ চলছে। ভারতের হেমনগর থেকে এসব নৌযান রায়মঙ্গল নৌ-সীমান্ত হয়ে সুন্দরবনের কাঁচিকাটা, মালঞ্চ, আড়পাঙ্গাসিয়া, বাটুলা, শাকবাড়িয়া, বজবজা, ঝপঝপিয়া, আড়ুয়া শিবসা, শিবসা নদী হয়ে মোংলা বা খুলনায় যায়। এ পথ পাড়ি দিতে নৌযানগুলোর অন্তত আট ঘণ্টা সময় লাগে।

নিখোঁজ জেলের স্বজন কয়রার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভারত থেকে আসা মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় নৌকা ডুবে জেলে নুরুল ইসলাম নিখোঁজ হয়েছেন। আমরা সংবাদ পেয়ে গতকাল ভোর থেকে সুন্দরবনের নদী-খালে তল্লাশি করছি। আজ সকাল পর্যন্ত বন বিভাগ ও নৌ পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে এলাকার লোকজন দিন–রাত তল্লাশি করেও নিখোঁজ জেলের সন্ধান মেলেনি।’

খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এম এ হাসান বলেন, নিখোঁজ জেলের সন্ধান পেতে নদীতে তল্লাশি অব্যাহত আছে।

বিআইডব্লিউটিএর প্রচলিত রীতি অনুযায়ী রাতে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল না করার কথা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি শেখ হারুন অর রশীদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনিয়ন্ত্রিতভাবে নৌযান চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। সুন্দরবনের ভেতরে জাহাজের ধাক্কায় নৌকাডুবিতে নিখোঁজ জেলে নুরুল ইসলামের দুটি সন্তান আর স্ত্রী চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’