হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি তুলনামূলকভাবে কমলেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় নদীটির বাল্লা সীমান্ত পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার ওপরে পরিমাপ করা হয়েছে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার একাই স্থানে পানি ২৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে সেখানে ৮০ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ কমেছে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, টানা ২ দিনের বৃষ্টিপাত ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে খোয়াই নদীর পানি দুই দিন ধরে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীটির উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আটারোমুড়া নামক স্থানে। পরে এটি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ত্রিপুরা রাজ্যের আটারোমুড়া এলাকায় ভারতীয় বাঁধের গেট বন্ধ হওয়ায় নদীটির পানি নামতে শুরু করেছে।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় খোয়াই নদীর বাল্লা সীমান্ত পয়েন্টে পানি ১৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল; যা গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ছিল ২৭৯ সেন্টিমিটার। একইভাবে নদীর হবিগঞ্জ শহর প্রতিরক্ষা বাঁধের মাছুলিয়া এলাকায় ১৮৫ থেকে কমে ১৬৫ সেন্টিমিটার, শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টে ১৭০ থেকে কমে ১৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার কুশিয়ারা ও কালনী-কুশিয়ারা নদীতেও পানির প্রবাহ কমেছে।
খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হবিগঞ্জ শহর প্রতিরক্ষা বাঁধের তেঘরিয়া, গোপায়া ও তেতৈয়া এলাকায় পানি উপচে শহরে কিছু এলাকায় প্রবেশ করেছে। পানির প্রবাহ রুখতে বিভিন্ন জায়গায় বালুর বস্তা ফেলছে পাউবো ও এলাকাবাসীরা।
ভারত তাদের অংশের বাঁধ বন্ধ করায় নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, আজ শুক্রবার বৃষ্টিপাত না হলে এ পানি আরও কমবে।হবিগঞ্জ পাউবো উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হাবিবুর রেজা
তেতৈয়া এলাকার বাসিন্দা জয়নাল মিয়া বলেন, ‘নদীর পানি কিছুটা কমলেও শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ এখনো ঝুঁকিতে আছে। বাঁধ ভাঙার আশঙ্কায় গতকাল থেকে আমরা গ্রামবাসীরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি।’
এদিকে ঢাকা-সিলেট রেল লাইনের শায়েস্তাগঞ্জ সেতু পানিতে ডুবে থাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা থেকে সিলেট-ঢাকা ও সিলেট চট্টগ্রাম রুটে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনমাস্টার গৌর প্রসাদ দাস এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
হবিগঞ্জ পাউবো উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হাবিবুর রেজা প্রথম আলোকে জানান, ভারত তাদের অংশের বাঁধ বন্ধ করায় নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, আজ শুক্রবার বৃষ্টিপাত না হলে এ পানি আরও কমবে।
সুনামগঞ্জে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানিপ্রবাহ তুলনামূলকভাবে কমেছে ও বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে। জেলার কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হলেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে দেশের কয়েকটি স্থানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আতঙ্কে আছেন বাসিন্দারা।
পাউবোর কর্মকর্তারা বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়নি। একই সঙ্গে উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টি কম হওয়ায় সুরমাসহ অন্যান্য নদীর পানি কমছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৬ দশমিক ৯৯ মিটারে, যা বিপৎসীমার ৮১ সেন্টিমিটার নিচে। সেখানে পানির বিপৎসীমা ৭ দশমিক ৮০ মিটার। তবে গত দুই দিন উজান থেকে নামা ঢল ও বৃষ্টিতে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। মূলত সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢল নামে জেলাটিতে। এ কারণে নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি পায়।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা নদীর তীরের সদরপুর গ্রামের বাসিন্দা মইনুল ইসলাম বলেন, ‘সুরমা নদীর পানি কমছে। বৃষ্টি না হলে আরও পানি কমবে মনে হচ্ছে। দেশের অন্যান্য এলাকায় যেভাবে বন্যা দেখা দিয়েছে, এতে আমরাও আতঙ্কিত।’
এদিকে জগন্নাথপুর উপজেলার জগন্নাথপুর-বেগমপুর সড়কের ভাঙাবাড়ি এলাকায় সড়ক প্লাবিত হয়ে কয়েকটি গ্রামে কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকেছে। পাইলগাঁও ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের এসব গ্রামের বাসিন্দারা বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন। পাইলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নজমুদ্দিন জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সড়ক প্লাবিত হওয়ায় দুটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বৃষ্টি না হলে পানি আরও কমবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, সুনামগঞ্জ ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ার কারণেই মূলত পানি কিছুটা বেড়েছিল। এখন কমছে। পানি আবারও বাড়তে পারে। তবে সুনামগঞ্জে বড় কোনো বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই।