গাজীপুর সিটি নির্বাচন

আজমত উল্লার পক্ষে ঐক্যের সুর আওয়ামী লীগে 

জাহাঙ্গীরের অনুসারী নেতা-কর্মীদের দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে আনার বিষয়টি মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হতে না হতেই স্থানীয় আওয়ামী লীগে আজমত উল্লা খান ও জাহাঙ্গীর আলমকেন্দ্রিক দুটি বলয় তৈরি হয়। এর মধ্যে মনোনয়ন আটকে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। আর দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর আজমত উল্লা খান গাজীপুর নগরের আটটি থানায় দলের নেতা–কর্মীদের নিয়ে সভা করে যাচ্ছেন। এসব সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থেকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নেতা–কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছেন।

নেতা–কর্মীদের কোনো বিভেদ নেই উল্লেখ করে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেকেই বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে, কিন্তু বর্তমানে সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই।’

আজমত উল্লা খানের পক্ষে গতকাল বুধবার টঙ্গী আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে একটি মতবিনিময় সভা করেছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি গাজীপুর সিটিতে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানও। সভা শেষে জাহাঙ্গীর আলমকে ইঙ্গিত করে মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় থাকলেই কেবল হিরো হয়ে থাকা যায়, নয়তো জিরো হয়ে যাবেন। জনগণ আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন, নৌকাকে ভালোবাসেন। আওয়ামী লীগের ছায়াতল থেকে বের হয়ে একজন কর্মীও খুঁজে পাওয়া যাবে না।’

দলীয় নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় দলের বেশির ভাগ নেতা–কর্মী তাঁর অনুসারী হয়ে ওঠেন। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও দলের স্থানীয় নেতাদের নিয়ে জাহাঙ্গীরের আপত্তিকর একটি বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। ওই বছর ২৫ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় মেয়র পদ থেকে।

সাধারণ ক্ষমা পেয়ে এক বছর দুই মাস পর ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি জাহাঙ্গীর আলম দলে ফেরার চিঠি পান, কিন্তু ফিরে পাননি মেয়র পদ। দলীয় পদ হারানোর পর তাঁর দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ৬১ জন নির্বাচিত কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদ ফিরিয়ে দিতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। সব মিলিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে থেকে যান।

জাহাঙ্গীরের অনুসারী নেতা–কর্মীদের মান-অভিমান ভেঙে দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে আনার বিষয়টি মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সহযোগিতায় এই জটিলতা অনেকটা সমাধানের পথে। সিটি নির্বাচনে আজমত উল্লার পক্ষে কাজ করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন সবাই। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে আজমত উল্লার বাসভবনে গিয়ে তাঁর ভোটের মাঠে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

গাজীপুর মহানগর তাঁতী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার শিকদার বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম বহিষ্কার হওয়ার পর ফের দলে ফিরে আসার পর আমরা ভেবেছিলাম তিনি মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাবেন, কিন্তু তিনি তা পাননি। এমতাবস্থায় দলীয় প্রার্থী ও প্রতীকের পক্ষে আমাদের কাজ করতে হবে। নিজ নিজ এলাকায় আমাদের একটা অবস্থান রয়েছে। সেই অবস্থান ধরে রাখতে হলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

মহানগর আওয়ামী লীগের সব নেতা-কর্মীকে পাশে পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সবাই একযোগে নৌকার জন্য কাজ করবেন বলে কথা দিয়েছেন। দলের মধ্যে এখন কোনো বিবাদ নেই, আমরা সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ আছি।’