চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দুটি বালাম বই গায়েব

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানচিত্র
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মানচিত্র

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুম থেকে দুটি বালাম বই (যেখানে জমির দলিলের বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে) হারিয়ে গেছে। রেকর্ড রুমের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সদর উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার এ বিষয়ে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

রেকর্ড রুম থেকে বালাম বই হারানোর বিষয়ে সদর থানায় গত ২৯ নভেম্বর করা জিডিতে (জিডি নম্বর-১৬৩২) উল্লেখ করা হয়েছে, অনুমান ২০২৩ সালের ৮ জুন বা তার আগে হারিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

এর আগে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে একাধিক বালাম বইয়ের পাতা কেটে নতুন পাতা সংযোজন ও পাতায় লেখা ঘষামাজার ঘটনা ঘটেছে। একটি জালিয়াত চক্র এসব ঘটিয়ে জাল দলিল প্রস্তুত করে জমি দখলের পাঁয়তারা করে বলে অভিযোগ আছে। এ নিয়ে বিভাগীয় একাধিক তদন্ত ও দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা হলেও দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি।

সদর উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার জহিরুল ইসলাম জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে একটি তদন্ত হয়েছে। তবে কাউকে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়নি।  

জেলা রেজিস্ট্রার আফছানা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বালাম বই হারানোর ঘটনায় গোমস্তাপুর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার রাফায়েল ফাতেমীকে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তিনি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিবেদনে পুরো ঘটনা উদ্‌ঘাটিত হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জেলা রেজিস্ট্রার আবারও তদন্ত করবেন। সেই তদন্ত শুরু হয়েছে। এর আগে বালাম বই থেকে পাতা কেটে নতুন পাতা সংযোজনের প্রচুর ঘটনা ঘটেছে। তবে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা যায়নি। এ ছাড়া মহাপরিদর্শক, রেজিস্ট্রেশন বিভাগের দপ্তর থেকেও তদন্ত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। সম্প্রতি বালাম বই হারানো ও এর আগে বালাম বই থেকে পাতা কেটে নতুন পাতা সংযোজনের ঘটনায় রেজিস্ট্রেশন বিভাগের মহাপরিদর্শক আবারও তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বালাম বইয়ের পাতা কেটে নতুন পাতা সংযোজন করে একটি জালিয়াত চক্র ভুয়া দলিল তৈরি করে জমি দখলের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। এমন অভিযোগে সদর উপজেলার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দুটি মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ তথ্য জানিয়ে একটি মামলার আইনজীবী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভুয়া দলিল হিসেবে অভিযুক্ত এমন দুটি দলিল আদালতের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আমরা দলিলটি ভুয়া বলে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।’

এই আইনজীবী বলেন, জেলা রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুম একটি সংরক্ষিত এলাকা। সেখান থেকে মানুষের জমির দলিল, দলিলের বিবরণ, সংরক্ষিত থাকা বালাম বই, বইয়ের পাতা কেটে সংযোজন করা উদ্বেগের। এতে মানুষের জমির স্বত্ব হুমকির মুখে পড়বে।

জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী গোলাম কবীর প্রথম আলোকে বলেন, রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুম থেকে গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র হারিয়ে যাওয়া ও পাতা কেটে পরিবর্তন করা গুরুতর বিষয়। যার হেফাজতে রেকর্ড রুমের দায়িত্ব থাকে, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়া দরকার।