ঝিনাইদহে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় নৌকার কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা

বরুন কুমার ঘোষ
ছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় বরুন কুমার ঘোষ (৪৫) নামে নৌকার এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঝিনাইদহ শহরের ঘোষপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত বরুন কুমার ঘোষ শহরের ঘোষপাড়া এলাকার নরেন ঘোষের ছেলে। তিনি ঝিনাইদহ জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সদস্য ছিলেন।

স্বজনদের দাবি, বরুন ঝিনাইদহ-২ (হরিণাকুণ্ডু-সদর একাংশ) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকীর পক্ষে নির্বাচন করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর (ঈগল প্রতীক) লোকজন তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, বরুণ নৌকার কর্মী ছিলেন। তিনি ভোটের আগে তাঁর (তাহজীব) কাছে এসে জানিয়েছিলেন, একটি বিশেষ মহল তাঁকে নৌকার ভোট না করতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তখন তিনি তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন, নৌকার সমর্থন করলে বা শেখ হাসিনার দল করলে কোনো ভয় নেই। এরপর এই হত্যার ঘটনা ঘটল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরুন কুমার ঘোষ বাড়ি থেকে বের হয়ে ঘোষপাড়া ব্রিজ মোড় এলাকার একটি দোকানে বসে ছিলেন। এ সময় ৫ থেকে ৭ জন দুর্বৃত্ত হামলা করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে যায়। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের স্বজনদের আহাজারি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদর হাসপাতালে

সরেজমিনে দেখা গেছে, যে স্থানে বরুন কুমারকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা, সেখানে জমাট রক্তের দাগ। পেছনের দোকানটি বন্ধ। আশপাশ থমথমে অবস্থা। কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। হত্যাকারীরা কীভাবে আসেন, না কি আগে থেকেই ওত পেতে ছিলেন কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।

হাসপাতালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিহতের বড় বোন সুচিত্রা রানী বলেন, তাঁদের নিরাপত্তা কোথায়। তাঁরা নৌকায় ভোট দিয়ে কী অপরাধ করেছেন? তিনি এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানান।

অভিযোগের বিষয়ে সদ্য নির্বাচিত ঈগল প্রতীকের প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর মুঠোফোনে কল করলে তিনি ‘ব্যস্ত আছেন, এই মুহূর্তে কথা বলতে পারছেন না’ বলে ফোন রেখে দেন।

হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ

এদিকে রাতে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ও বিচার চেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল খালেক ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি নাসের আলম সিদ্দিকী ওরফে উজ্জ্বলের নেতৃত্বে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয়েছে। সদর হাসপাতালের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে হামদহ মনুমেন্ট পর্যন্ত যান নেতা-কর্মীরা। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন আবদুল খালেক ও নাসের আলম সিদ্দিকী। বরুন কুমার নৌকার কর্মী ছিলেন উল্লেখ করে তাঁরা অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মীর আবিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কী কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, এখনই বলা যাচ্ছে না। পুলিশ কাজ করছে। আশা করছেন, দ্রুত ঘটনার রহস্য উদ্ধার হবে এবং আসামি গ্রেপ্তার হবে।

ঝিনাইদহ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বিনয় কৃষ্ণ বলেন, বরুন ঘোষ ভালো মানুষ ছিলেন। ব্যবসা করেই তাঁর জীবন চলতো। তাঁর স্ত্রী ও এক কন্যা আছে। তিনি বলেন, যারাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাঁদের বিচার হতে হবে।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা ও সদরের কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-২ আসনে এবার মোট ১১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের তাহজীব আলম সিদ্দিকী (নৌকা), জাসদের ফজলুল কবির (মশাল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের নাসির উদ্দীন (ডাব), জাতীয় পার্টির মাহফুজুর রহমান (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির জামরুল ইসলাম (সোনালী আঁশ), সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের শরীফ মোহাম্মদ বদরুল হায়দার (ছড়ি), এনপিপির মিজানুর রহমান (আম), কল্যাণ পার্টির আবদুল হান্নান খাঁ (হাতঘড়ি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির খোন্দকার হাফিজুর রহমান ফারুক (কুঁড়েঘর) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। এর মধ্যে নাসের শাহরিয়ার ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।