চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চাঁদা না পেয়ে মারধর, ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে মামলা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের চার নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা না পেয়ে ঠিকাদারকে হলের কক্ষে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবদুর রব হলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার হাটহাজারী থানায় চার নেতার নাম উল্লেখ করে মামলা করেন ভুক্তভোগী ঠিকাদার মো. তামজিদ উদ্দীন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় আরও সাত-আটজনকে আসামি করা রয়েছে।  

অভিযুক্ত এই চার নেতা বিলুপ্ত হওয়া শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদধারী ছিলেন। তাঁরা হলেন বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি এম মেহেদী হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক শাফায়েত হোসেন, উপকর্মসূচি ও পরিকল্পনা সম্পাদক মাশরুর কামাল ও সহসম্পাদক মো. হৃদয়। চাঁদাবাজির অভিযোগ, সাংবাদিককে মারধরসহ নানা অভিযোগে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্র।

মামলার বাদী মো. তামজিদ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা সেকান্দর হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকাদার সমিতির সভাপতি। বাবা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত থাকায় তাঁর ঠিকাদারি কাজ তামজিদই দেখাশোনা করছেন। বর্তমানে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে একটি নামফলক নির্মাণের কাজ করছেন তাঁরা। বেশ কয়েক দিন ধরে অভিযুক্ত এ চার নেতা তামজিদ ও তাঁর বাবার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছেন। টাকা না দেওয়ায় কয়েকবার তাঁদের হুমকিও দেওয়া হয়েছে৷

মামলার এজাহারে তামজিদ উল্লেখ করেন, গত বুধবার এ চার নেতা তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে চলমান নামফলকের কাজ বন্ধ করে দেন। বিকেল চারটায় তিনি ঘটনাস্থলে এসে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এ চারজনসহ আরও সাত থেকে আটজন তাঁকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা এক বন্ধু এর প্রতিবাদ করলে তাঁকেও মারধর করা হয়।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পাশে তাঁদের এক দফা মারধরের পর অপহরণ করে শহীদ আবদুর রব হলে তৃতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে যান এই চার নেতা। সেখানে গিয়ে তাঁদের দুজনকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে তাঁদের দুজনকে জখম করা হয়। তাঁরা দুজন হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন।

তামজিদ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, সেই দিনের এ ঘটনার পর সন্ধ্যার দিকে তাঁর কয়েকজন বন্ধু মধ্যস্থতা করে তাঁদের দুজনকে শহীদ আবদুর রব হল থেকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় তিনি মামলা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকেও জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঠিকাদারকে মারধরের ও চাঁদাবাজির অভিযোগটি পেয়েছেন। এ ঘটনা তদন্তে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মেহেদী হাসান, শাফায়েত হোসেন, মাশরুর কামাল ও মো. হৃদয়ের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা কেউ ধরেননি।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান আজ শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত শুরু করেছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন নয়। গত বছরে অন্তত চারবার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছেন ঠিকাদারেরা। সর্বশেষ গত বছর ৩১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে চাঁদাবাজিতে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবিতে সব ধরনের কাজ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন ঠিকাদারেরা।