কুমিল্লা নগরের ঝাউতলা এলাকায় আজ বুধবার বিকেলে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের সমর্থনে লিফলেট বিতরণ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ
কুমিল্লা নগরের ঝাউতলা এলাকায় আজ বুধবার বিকেলে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের সমর্থনে লিফলেট বিতরণ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ

১৫ জানুয়ারির মধ্যে সরকারকে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করতে হবে: হাসনাত আবদুল্লাহ

১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ‘ঘোষণাপত্র’ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার টাউন হল মাঠে ঘোষণাপত্রের সমর্থনে লিফলেট বিতরণকালে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন তিনি।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতির বিষয়ে সরকার ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দরকার ছিল পদক্ষেপ নেওয়ার। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) ৩১ ডিসেম্বর জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ঘোষণা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু যেহেতু সরকার দায়িত্ব নিয়েছে সকল রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির, সে জন্য আমরা সরকারের কথায় আশ্বস্ত হয়ে ৩১ ডিসেম্বর কোনো ঘোষণা দিইনি, আমরা ভরসা রেখেছি। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বরের পর এত দিন পার হলেও আমরা সরকারের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করতে।’

আজ বেলা আড়াইটার দিকে নগরের পুলিশ লাইনসের সামনে থেকে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ শুরু করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। পুলিশ লাইনস থেকে শুরু হয়ে কান্দিরপাড়, ঈদগাহ, মোগলটুলী, রাজগঞ্জ হয়ে ফের কান্দিরপাড়ে এসে কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘সরকারের জুলাই ঘোষণাপত্রে অবশ্যই শহীদ ও আহতদের স্বীকৃতি দিতে হবে। সেখানে ৪৭,৭১ এবং ’২৪–এর সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকতে হবে। আমরা কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ থেকে, আওয়ামী জাহেলিয়াত থেকে মুক্তি পেয়েছি, সেটির স্বীকৃতি সেখানে থাকতে হবে। যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছে, তাদেরও স্বীকৃতি থাকতে হবে। জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিপক্ষে, সেটার প্রতিফলন জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে থাকতে হবে। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে ছুটে গিয়ে মানুষের কাছে জানতে চাইব তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে কী দেখতে চায়। জনগণ যেভাবে চাইবে, সেভাবেই ২৪–পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে, যেখানে ফ্যাসিবাদ, দুঃশাসন ও অপশাসন থাকবে না।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক বলেন, ‘আপনারা বিভিন্ন দোহাই দিচ্ছেন সিন্ডিকেটের হাত পরিবর্তন হয়েছে, চাঁদাবাজের হাত পরিবর্তন হয়েছে বলে। কিন্তু আপনাদেরকে তো দোহাই দেওয়ার জন্য এখানে আনা হয়নি, কোনো অজুহাত দেওয়ার জন্য আনা হয়নি। আমরা আপনাদেরকে এখানে এনেছি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। যে হাত চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে, সেই হাতকে ভেঙে দিতে হবে। আপনাদের অজুহাত দেওয়ার সুযোগ নেই, পদক্ষেপ নিতে হবে।’

জুলাই বিপ্লবের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও আহতদের আর্তনাদ এখনো শুনতে পান বলে জানান হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার সবচেয়ে গুরুত্ব দেবে জুলাই বিপ্লবের আহতদের এবং শহীদ পরিবারকে। জুলাই ফাউন্ডেশনে আমরা আহত এবং শহীদদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে শুনতে পাই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দোহাই দিয়ে তাঁদেরকে প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমরা ২৪–পরবর্তী বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দোহাই আর দেখতে চাই না।’

গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণকালে ‘জুলাইয়ের প্রেরণা, দিতে হবে ঘোষণা’ স্লোগান দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা। এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলা ও মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।