পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে এবারও অনেক পর্যটক পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে আসবেন বলে আশা করছেন পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা পর্যটক টানতে হোটেলের কক্ষ ভাড়ায় ছাড় দিয়েছেন। ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকেরা আসা শুরু করবেন বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটায় অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত হোটেল-মোটেল আছে ৭৫টি। এর বাইরে আছে আরও ৭৫টি হোটেল-মোটেল। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির হোটেল আছে ১০-১৫টির মতো। প্রথম শ্রেণির ১০-১৫টি হোটেলের ৫০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির হোটেলের ৭০-৮০ শতাংশ এবং তৃতীয় শ্রেণির হোটেলের ৫০-৬০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। এসব হোটেলে সব মিলিয়ে ২৫-৩০ হাজার পর্যটক থাকতে পারবেন। তবে পর্যটকের চাপ বেশি হলে গ্রামীণ ট্যুরিজমের আওতায় আরও ৫ হাজারের মতো পর্যটক রাতযাপন করতে পারবেন। প্রতিটি হোটেল-মোটেলের মালিকেরা কক্ষ ভাড়ায় কমবেশি ছাড় দিয়েছেন।
বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কুয়াকাটা সৈকত, পাশের এলাকাসহ আবাসিক হোটেলগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। পর্যটকের আনাগোনা বাড়লে বিক্রিও বাড়বে, এমন আশায় শুঁটকি ব্যবসায়ী, শামুক-ঝিনুকের দোকানদার, বাণিজ্যিক ফটোগ্রাফার, অটোচালক, সৈকতের ছাতা-বেঞ্চ ব্যবসায়ী, চা-পানের দোকানদার, চটপটি বিক্রেতারা।
ঈদের দিন বিকেল থেকে হোটেল-মোটেলসহ আকর্ষণীয় স্পটগুলো পর্যটকদের পদভারে মুখর হবে বলে ধারণা ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজের।
কুয়াকাটার সবচেয়ে অভিজাত হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলা। হোটেলটির মানবসম্পদ ও প্রশাসনের কর্মকর্তা শাহীন আলম বলেন, তাঁদের ১১টি ভিলা আছে। ভিলাগুলোর ৭০ শতাংশ বুকিং হয়েছে। এ ছাড়া ১৫০টি কক্ষ আছে। এসব কক্ষের ৫০ শতাংশ ইতিমধ্যে বুকিং হয়েছে। ঈদের তৃতীয় ও চতুর্থ দিন থেকে এসব কক্ষগুলোর ৯০ শতাংশ বুকিং হয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু বলেন, সরকারি সনদপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষিত ৪৩ জন কর্মী আছে তাঁদের। তাঁরা দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্পট ঘুরিয়ে দেখান। এ ছাড়া আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া, খাবার হোটেলে নিয়ে যাওয়া এবং কেনাকাটা করতে সহায়তা করে থাকেন তাঁদের কর্মীরা। তবে তাঁর ধারণা, গত ঈদের তুলনায় এবার পর্যটকের আগমন কম হতে পারে। কারণ, এবার কোরবানির ঈদ বর্ষা মৌসুমে পড়েছে। আর ঈদের আগেই ছুটির দুই দিন শেষ হয়ে গেছে।
পর্যটকদের ব্যাপক চাপের কারণে যাতে যানজট না হয়, সে জন্য উপজেলা প্রশাসন কুয়াকাটার নয়াপাড়া এলাকায় নির্মাণাধীন বাস টার্মিনাল পার্কিংয়ের জন্য প্রস্তুত করেছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পর্যটকদের সুবিধার্থে বুধবার সকাল থেকে অভিযান চালিয়ে সৈকতের ২০-৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
পর্যটন পুলিশ কুয়াকাটা অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে ৪০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। সাগরে গোসল করতে নেমে কেউ যেন দুর্ঘটনায় না পড়েন, সে জন্য তাঁদের সতর্ক করতে পর্যটন পুলিশের আলাদা দল তৎপর আছে। কেউ গোসলে নেমে বিপদে পড়লে তাঁদের উদ্ধার করতে ১২ সদস্যের একটি স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি আছে।