নাটোর সিংড়ায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদের বাসায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নসংক্রান্ত সভায় অংশ নেওয়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা বিএনপি।
আজ বৃহস্পতিবার জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত চিঠি ডাকযোগে তাঁদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাঁরা ওই চিঠি হাতে পাননি।
চিঠি পাওয়া ওই দুই নেতা হলেন সিংড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আইনজীবী মজিবুর রহমান ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আলী আজগর। চিঠিতে তাঁদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে ব্যাপারে স্বাক্ষরকারী বিএনপির নেতার কাছে সশরীর হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
তবে ওই দুই নেতা বলছেন, আওয়ামী লীগের সভার ব্যাপারে তাঁদের জানানো হয়নি। দলীয় নেতা হিসেবে নন, আইনজীবী হিসেবে গিয়েছিলেন। সভার ব্যাপারে জানলে সেখানে যেতেন না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১২ নভেম্বর রাতে সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদের বাসায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নসংক্রান্ত সভা ছিল। ওই সভায় অংশগ্রহণ ও নৈশভোজের জন্য সিংড়ার সব আইনজীবীকে আমন্ত্রণ জানান প্রতিমন্ত্রী। তাঁর আমন্ত্রণে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মজিবুর রহমান ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আলী আজগর খানসহ বিএনপি-জামায়াতের বেশ কয়েকজন আইনজীবী অংশ নেন। প্রতিমন্ত্রী নিজে অতিথিদের খাওয়াদাওয়ার তদারকি করছিলেন। ওই অনুষ্ঠানের কিছু ছবি পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বিএনপির নেতারা জানান, প্রতিমন্ত্রীর বাসায় ওই সভার বিষয়টি জেলা বিএনপির নেতাদের নজরে আসে। দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে ওই সভার ছবি ও ভিডিও জেলার নেতাদের কাছে পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ ওই দুই নেতাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে এক দফা আন্দোলন করছে বিএনপি। ইতিমধ্যে লাগাতার হরতাল-অবরোধের মাধ্যমে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আন্দোলন সফল করতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা যখন সরকারের জুলুম-নির্যাতন সহ্য করছেন, তখন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে পরামর্শক হিসেবে মতবিনিময় সভায় যোগদান করে ওই নেতারা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। এ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী তিন দিনের মধ্যে স্বাক্ষরকারী বিএনপির নেতার কাছে সশরীর হাজির হয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির নেতা মজিবুর রহমান ও আলী আজগর খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে ওই সভার ব্যাপারে তাঁরা জানতেন না। সিংড়ার সব আইনজীবীকে আমন্ত্রণ জানানোয় তাঁরা ধারণা করেছিলেন, প্রতিমন্ত্রী সৌজন্যবশত তাঁদের আমন্ত্রণ করেছেন। দলীয় নেতা হিসেবে নন, আইনজীবী হিসেবে গিয়েছিলেন। আগে জানলে যেতেন না। আয়োজকেরাও বিষয়টি স্পষ্ট করেনি।
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন ও সভার সমন্বয়কারী আইনজীবী বকুল হোসেন বলেন, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য হয়েছেন। এ জন্য তাঁর বাসভবনে এক মাস ধরে বিভিন্ন পেশাজীবীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মতামত নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সিংড়ার আইনজীবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে কারও আপত্তি থাকলে তিনি আসতেন না। প্রতিমন্ত্রী কাউকে চাপ দিয়ে নিয়ে আসেননি বা দলীয় নেতা হিসেবেও দাওয়াত করেননি।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। তাঁদের সশরীর হাজির হয়ে চিঠির জবাব দিতে বলা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে তাঁরা চিঠি হাতে পেয়ে যাবেন।