নোয়াখালীতে ঘরে গাছ পড়ে ১১ মাসের শিশুর মৃত্যু

নোয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে উপড়ে পড়া গাছ বিদ্যুতের লাইনসহ সড়কের ওপরে। আজ মঙ্গলবার সকালে জেলা শহর মাইজদীর চিকিৎসা সহকারী প্রশিক্ষণ স্কুলের সামনের সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে রান্নাঘরে গাছ উপড়ে পড়ে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সানজিদ আফ্রিদি নামের শিশুটির বয়স ১১ মাস। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার পূর্ব চরবাটা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সানজিদ ওই গ্রামের বাসিন্দা আইনজীবী মো. আবদুল্লাহর ছেলে। একই ঘটনায় শিশুটির মা সানজিদা খানম (২৫) গুরুতর আহত হয়েছেন।

শিশুটির বাবা মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত আটটার দিকে ঝড়ে গাছ উপড়ে বাড়ির রান্নাঘরে পড়েছিল। মা-ছেলে তখন ওই ঘরে ছিল। আহত অবস্থায় শিশুটি ও তার মাকে ঢাকার নিউরো সায়েন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু সানজিদকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত সানজিদা হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন।

ঘূর্ণিঝড়ে জেলা শহর মাইজদী ছাড়াও উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটের বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এতে বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অন্যদিকে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো বাতাসে উপজেলাগুলোর প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির আমন ফসল ও আড়াই শ হেক্টর জমির উঠতি শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে সুবর্ণচরে বসতঘরের ওপর গাছ পড়ে একটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ভেতরে থাকা এক বছরের শিশু মারা গেছে। এ ছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে কিছু ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য এখনো জানা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ, তমরদ্দি, নলচিরা, সুখচর, হরণী ও চানন্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এতে অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। ঝড়ের তাণ্ডবে উড়ে যাওয়া বসতঘরের টিনের আঘাতে তমরদ্দিতে মেহেদী হাসান (৩২), নলচিরায় গাছের ঢাল পড়ে জগদীশ চন্দ্র দাশসহ (৪০) কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গুরুতর আহত মেহেদী হাসানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ১ লাখ ৬ হাজার বাসিন্দা আজ সকাল নাগাদ তাঁদের বসতবাড়িতে ফিরে গেছেন। গতকাল বিকেল ও সন্ধ্যায় এসব বাসিন্দা উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও তাঁদের অনেকেই শুকনা খাবার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিটি উপজেলার ইউএনওর মাধ্যমে শুকনা খাবার কেনার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কাছে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাঠানো হয়েছে। হয়তো কোথাও আগে-পরে শুকনা খাবার পৌঁছাতে পারে।