সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনায় আরও ছয়টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে গতকাল বুধবার রাতে সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় একটি এবং আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের আদালতে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে।
এসব মামলায় আসামি হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পুলিশ কমিশনার, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ ৩৮২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৬২০ জনকে।
আজ দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নগরের সেনপাড়া এলাকার ছাত্রদল নেতা জুবেল আহমদ (স্বপন) অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেছেন। এই মামলায় ৪ আগস্ট সকালে বন্দরবাজার এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। এতে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. জাকির হোসেন খানসহ ৬৪ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে সিলেট নগরের ইলেকট্রিক সাপ্লাই এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বাদী হয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দ্বিতীয় মামলাটি মামলা করেন। এ মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী (নাদেল), রণজিত সরকার, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান আহমদ, সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ, সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখসহ ৪৭ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলার আরজিতে ৪ আগস্ট দুপুরে সিলেট নগরের বড়বাজার এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে গুলিবর্ষণের অভিযোগ আনা হয়। এতে অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে জালালাবাদ থানা এলাকার অনন্তপুরের বাসিন্দা মো. জুবেল আহমদ বিস্ফোরক আইনে তৃতীয় মামলাটি করেছেন। এ মামলায় সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশফাক আহমদসহ জালালাবাদ থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৯৪ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। মামলার আজিতে গত ১৭ জুলাই সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের তেমুখী এলাকায় ছাত্র জনতার ওপর গুলিবর্ষণের অভিযোগ আনা হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে গোলাপগঞ্জের কানিশাইলের বাসিন্দা মো. রফিক উদ্দিন বাদী হয়ে চতুর্থ মামলাটি করেছেন। এতে ৫৬ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আরজিতে ৫ আগস্ট দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সিলেট জেলা শ্রমিক দলের অর্থবিষয়ক সম্পাদক মো. রুহুল আমিন বাদী হয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে পঞ্চম মামলাটি করেছেন। এ মামলায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ, অতিরিক্ত উপকমিশনার সাদেক দস্তগীর কাউসার, হকার নেতা রকিব আলীসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার আরজিতে গত ২৩ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময় সিলেট নগরের লালদিঘির পাড় এলাকায় প্রভাব খাঁটিয়ে চাঁদা আদায় ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালতে দায়ের এই পাঁচ মামলা বিচারকেরা সংশ্লিষ্ট থানাকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে গতকাল রাতে সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় জামায়াত নেতা আমজদ আলী বাদী হয়ে ১০৮ জনের নাম উল্লেখ করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে ৪ আগস্ট তাঁর ওপর হামলা ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এতে মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ৬০-৭০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করেছেন বাদী।