সাতটি বিষয় ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে নরসিংদীতে সারজিস আলমদের লিফলেট বিতরণ

নরসিংদীর শিবপুরের ইটাখোলা চত্বরে লিফলেট বিতরণ করছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। বুধবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

‘জুলাইয়ের প্রেরণা, দিতে হবে ঘোষণা!’ স্লোগানে সাতটি বিষয় ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে নরসিংদীর সাধারণ মানুষের কাছে লিফলেট বিতরণ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতা-কর্মীরা। আজ বুধবার বেলা পৌনে দুইটায় জেলার শিবপুর উপজেলার মুন্সেফেরচর এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা চত্বরে এ লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয়।

‘প্রোক্লেমেশন সপ্তাহ’ উপলক্ষে জনমত তৈরি করতে এ লিফলেট বিতরণ করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। তাঁরা বিভিন্ন দোকানে দোকানে ঘুরে ও পথচারীদের হাতে লিফলেট বিতরণ করেন।

বিতরণ করা লিফলেটে উল্লেখ করা সাতটি দাবি হলো, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আহতদের বিনা মূল্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিৎসা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট করা; বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা; অভ্যুত্থানে আওয়ামী খুনি ও দোসরদের বিচার নিশ্চিত করার স্পষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করা; ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা পরিষ্কার করা; ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি সংবিধান বাতিল করে নির্বাচিত গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা; নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে সব ধরনের বৈষম্য নিরসনের মধ্য দিয়ে নাগরিক পরিচয় প্রধান করে রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি রাখা এবং বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিলোপ করতে সব ধরনের সংস্কারের ওয়াদা দেওয়া।

লিফলেট বিতরণের সময় সারজিস আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় যাচ্ছি। যে স্পিরিট নিয়ে তরুণ প্রজন্ম ও ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অভ্যুত্থান সফল করে খুনি হাসিনাকে দেশছাড়া করেছে, ২৪-এর এই স্পিরিটের বাস্তবায়ন চাই আমরা।’

সারজিস আলম জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের স্পিরিট আমরা ধারণ করি কি না? আমরা খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই কি না? আমরা আওয়ামী লীগের দোসরদের বিচার চাই কি না? আমরা শহীদ পরিবারের শহীদ মর্যাদা চাই কি না? যাঁরা রক্ত ও জীবন দিয়েছেন, তাঁদের স্বীকৃতি ঘোষণাপত্রে থাকা উচিত কি না? এসব প্রশ্নের জবাবে উপস্থিত শত শত মানুষ ‘হ্যাঁ’সূচক জবাব দেন।

সারোয়ার তুষার বক্তব্যে বলেন, একাত্তরের শহীদদের মতো চব্বিশের শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। ৪৭, ৭১ থেকে ২৪ পর্যন্ত সংগ্রামের ধারাবাহিকতা পরিষ্কার করতে হবে। আওয়ামী লীগের গুম-খুন ও লুটপাটের বিচার করতে হবে। এ ছাড়া যে তিনটা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণকে ভোট দিতে দেয়নি, এর শাস্তি দিতে হবে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে, এটা দেশের ছাত্র-জনতা কখনোই মেনে নেবে না। চব্বিশের গণহত্যা, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে।

আওয়ামী লীগ এমনই অপকর্ম করেছে, পুরো দলটিই এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে মন্তব্য করে সারোয়ার তুষার বলেন, ‘যে সংবিধান আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ও জুলুমের হাত থেকে আমাদের প্রোটেকশন দিতে পারে নাই, ওই সংবিধান বাতিল করে নতুন একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরি করতে হবে। আগামী নির্বাচন হতে হবে গণপরিষদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে গণপরিষদ সদস্যরা সংবিধান রচনা করবেন। বিদ্যমান সংবিধানে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।’