সিরাজগঞ্জে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগে গ্রেপ্তার পাঁচ প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসাইন এ আদেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শওকত আলী সেলিম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর সঙ্গে আট প্রিসাইডিং কর্মকর্তার গোপন বৈঠকের ঘটনায় গতকাল সোমবার ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তাঁদের আজ আদালতে সোপর্দ করা হলে তাঁরা জামিনের আবেদন করেন। বিচারক তাঁদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। আগামী বৃহস্পতিবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
কারাগারে যাওয়া পাঁচ প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হলেন যমুনা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও রাশিদাজ্জোহা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম, এসবি রেলওয়ে কলোনি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ওমর আলী কওমি মহিলা মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক ও এসবি রেলওয়ে কলোনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আবুসামা, বাহুকা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও বনবাড়িয়া পাইকপাড়া মডেল স্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাচ্চু কুমার ঘোষ এবং জনতা ব্যাংক এস বি ফজলুল হক সড়ক শাখার জ্যেষ্ঠ প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা ও হরিণা বাগবাটি স্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ইয়াসিন আরাফাত। এ ছাড়া তদন্তে এই গোপন বৈঠকের মূল আয়োজক হিসেবে শিয়ালকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সমিতির সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আমিনুর ইসলামের নাম উঠে আসে। অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাত ৯টার দিকে সিরাজগঞ্জ সদরের কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের বনবাড়িয়া কাদাই পার্কের ভেতরে নবনির্মিত গার্ডেন প্যালেস হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিনের গোপন বৈঠকের অভিযোগ পান রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পুলিশ আড়াই ঘণ্টা ধরে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। তবে সেখানে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও চেয়ারম্যান প্রার্থী কাউকেই পাওয়া যায়নি। শেষে ওই পার্কের প্রবেশপথ ও ভেতরের সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। সেই সঙ্গে পার্কটির তিন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। পরে ভিডিও ফুটেজ দেখে, প্রযুক্তির ব্যবহার করে ও পার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদের পর গোপন বৈঠকের সত্যতা পাওয়া যায়। এতে জড়িত আট প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নাম-পরিচয় শনাক্ত করা হয়।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম রোববার রাতেই এই বৈঠকের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিনকে (আনারস প্রতীক) ১২ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। সেই নোটিশের জবাব হাতে পেয়ে এ-সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্তসহ নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠিয়েছেন তিনি।
সেই সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম পরদিন সোমবার সন্ধ্যায় বাদী হয়ে ৮ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নাম উল্লেখ এবং আরও অজ্ঞাতনামা ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এতে প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিনকে এখনো আসামি করা হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা হচ্ছে। মামলার পরপরই আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলে। সোমবার রাত ১০টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শহীদ শামসুদ্দিন সম্মেলনকক্ষে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এ গোপন বৈঠক ও গ্রেপ্তার আসামিদের বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান।
রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে ১০টি ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের পরিবর্তন করে নতুন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।