নাটোরের বড়াইগ্রামে মারধরের শিকার উজ্জল কুমার মন্ডলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার দুপুরে উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে
নাটোরের বড়াইগ্রামে মারধরের শিকার উজ্জল কুমার মন্ডলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার দুপুরে উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে

ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ

জড়িতরা বিএনপির কেউ হলেও পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বললেন রিজভী

নাটোরে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে পুলিশে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা বিএনপির নেতা-কর্মী হলেও দ্রুত তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানোর ঘটনাকে বেআইনি বলে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

আজ রোববার দুপুরে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল ও তাঁর পরিবার এবং বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে দেখা করার পর নাটোরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে রুহুল কবির রিজভী দলীয় সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বড়াইগ্রামের বনপাড়ার ব্যবসায়ী উজ্জ্বল কুমার মণ্ডলকে মারধরের ঘটনাটি ভাইরাল (ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া) হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে এসেছে। ঘটনাটি সরেজমিন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে তাঁকে নির্দেশনা দেওয়ার পর তিনি নাটোরে এসেছেন। প্রথমে তিনি ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে ঘটনার খোঁজখবর নেন। পরে বড়াইগ্রাম থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি পুলিশকে অবিলম্বে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

রিজভী আরও বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিএনপির কেউ হলেও তাঁকে ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি তিনি ঢাকায় পৌঁছানোর আগেই যেন এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী যুবক বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় তাদের দলের কর্মী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের কোনো অভিযোগ থাকলে সে ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তাঁকে জোর করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পেটানো ঠিক হয়নি। বিএনপি এমন নীতিতে বিশ্বাস করে না। বিএনপি সব সময় মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। কেউ আইন হাতে তুলে নিলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে সাত থেকে আট শ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘ভুক্তভোগী যেহেতু একটি হিন্দু পরিবারের সদস্য, ঘটনাটি সুযোগসন্ধানীরা নানাভাবে নিতে পারে। এটাকে ইস্যু করে অপপ্রচার চালাতে পারে। একটি দেশের গণমাধ্যম অপপ্রচারের জন্য তৈরি হয়ে আছে। কিন্তু বিএনপি গভীরভাবে বিশ্বাস করে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কেউ বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অন্যায় করলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। অন্যের অধিকারকে আমরা সম্মান করি।’

ভুক্তভোগীর পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে দেখা করে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার দুপুরে

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে রিজভী বলেন, ঘটনার পর ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানোর বিষয়টি তিনি জানতেন না। যদি পুলিশ এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড করে থাকে, তাহলে সেটি বেআইনি হয়েছে।

রিজভী বলেন, ‘বিএনপি নেতা-কর্মীদের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার সৎ সাহস রয়েছে। কারণ, আমরা কোনো অন্যায় করিনি। তাই আমাদের নেত্রীকে পালাতে হয়নি। অথচ আওয়ামী লীগ এটা বিশ্বাস করত না। তারা নিজেরা অসৎ ছিল। তারা ফ্যাসিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল। তাই তাদের নেত্রীকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সহ অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান (সুমন), জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল ইসলাম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীনসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

গত বুধবার নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে বৃদ্ধ মা-বাবা ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সামনে উজ্জ্বল কুমার মণ্ডল (২৫) নামের ওই ব্যবসায়ীকে বেধড়ক পেটানোর পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার সঙ্গে চলাফেরা করায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁকে পেটান বলে অভিযোগ। ওই ঘটনার একটি ভিডিও শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শুক্রবার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘নাটোরে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে পুলিশে দিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা, ভিডিও ভাইরাল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।