আজ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস

যক্ষ্মা চিকিৎসার ক্লিনিকে নেই এক্স-রে যন্ত্র

৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রোগীর কফ পরীক্ষায় যক্ষ্মা ধরা পড়ে না, কিন্তু এক্স-রেতে ধরা পড়ে। তাই বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে এক্স-রে যন্ত্র থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

ময়মনসিংহের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিনা মূল্যে দেওয়া হয় যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা। তবে সদর উপজেলায় নেই কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলার রোগীরা যক্ষ্মা রোগের উপসর্গ নিয়ে যান ময়মনসিংহ নগরের বক্ষ্যব্যাধি ক্লিনিকে। সে ক্লিনিকে কফ পরীক্ষা করা হলেও নেই এক্স-রে যন্ত্র। ফলে এক্স-রে করাতে রোগীদের অন্য হাসপাতালে যেতে হয়।

সদর উপজেলার বক্ষব্যাধি ক্লিনিকটি ময়মনসিংহ নগরের র‌্যালির মোড় এলাকায় অবস্থিত। টিনের চালার ছোট একটি ভবনে চলে এর কার্যক্রম। টিনের এ ভবনে এক্স-রে যন্ত্র ব্যবহার করা সম্ভব নয় বলে জানান বক্ষব্যাধি ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় আজ শুক্রবার বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালন করা হচ্ছে।

গত সোমবার সকালে বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে গিয়ে কথা হয় ক্লিনিকের কনসালট্যান্ট অনুপম দত্ত রায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে এক্স-রে যন্ত্র না থাকায় রোগীদের বিনা মূল্যে এক্স-রে করার জন্য পাঠানো হয় নগরের মাসকান্দা এলাকায় অবস্থিত ব্র্যাকের যক্ষ্মা রোগ চিকিৎসাকেন্দ্রে। সেখান থেকে এক্স-রে প্রতিবেদন নিয়ে আবারও আসতে হয় বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে। যক্ষ্মার লক্ষণ থাকার পরও অনেকের কফ পরীক্ষায় তা ধরা পড়ে না। সেসব রোগীর জন্য এক্স-রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রোগীর কফ পরীক্ষায় যক্ষ্মা ধরা পড়ে না, কিন্তু এক্স-রে করলে ধরা পড়ে।

যক্ষ্মার লক্ষণ কী, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের যক্ষ্মার প্রধান লক্ষণ একটানা দুই সপ্তাহের বেশি কাশি, জ্বর ও শরীরের ওজন কমতে থাকা। শিশুদের ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও মানসিক অবসাদ।

গত সোমবার যক্ষ্মা রোগের উপসর্গ নিয়ে বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে পরীক্ষা করাতে আসেন সদর উপজেলার চর সিরতা গ্রামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, সকালে বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে গিয়ে প্রথমে কফ পরীক্ষা করতে দেন। পরে এক্স-রে করার জন্য যেতে হয় মাসকান্দায়। সেখান থেকে আবারও বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে। যানজটের মধ্যে এভাবে যাতায়াত করে তিনি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের কনসালট্যান্ট অনুপম দত্ত রায় বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর হিসেবে এখানে আসলে একটি পূর্ণাঙ্গ বক্ষব্যাধি হাসপাতাল থাকা উচিত। কিন্তু সেটি না থাকায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। মূলত টিনের চালার ভবনে অস্থায়ীভাবে চলে এ বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের কার্যালয়। টিনের এ ভবনের পাশে রয়েছে একটি পরিত্যক্ত গ্যারেজ। তাঁরা ওই জায়গাটি সংস্কার করে সেখানে একটি এক্স-রে যন্ত্র বসানোর জন্য সুপারিশ করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।

ময়মনসিংহ বক্ষব্যাধি ক্লিনিক সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ময়মনসিংহ জেলায় যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। ২০২১ সালে জেলায় যক্ষ্মা রোগী ছিল ৮ হাজার ৮৫৫ জন। ২০২২ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ হাজার ৬৪৮। ২০১২ সালের তুলনায় ময়মনসিংহ জেলায় যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে। ২০২১ সালে জেলায় এ রোগে মারা যায় ১৯২ জন। ২০২২ সালে মারা যায় ১৪১ জন।

চিকিৎসক অনুপম দত্ত রায় আরও জানান, সরকারের লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।

ময়মনসিংহের সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, বর্তমানে বিনা মূল্যে জেলার ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা ও ওষুধ দেওয়া হয়। সরকারের সহযোগী হিসেবে ময়মনসিংহের একাধিক বেসরকারি সংস্থা যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকে।

গত সোমবার দুপুরে ব্র্যাকের যক্ষ্মা চিকিৎসাকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. সাইফউদ্দিন বলেন, ময়মনসিংহের চারটি উপজেলায় ব্র্যাক যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকে। এক্স-রেসহ সব ধরনের সেবাই বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। ড্যানিয়েল ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা জেলার বাকি আটটি উপজেলায় একই ধরনের সেবা দিয়ে থাকে।

সিভিল সার্জন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহের বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে এক্স-রে যন্ত্র স্থাপন করার জন্য একাধিকবার স্বাস্থ্য বিভাগে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। ময়মনসিংহে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল করার আবেদনও করেছেন। তবে এসব দাবি কবে পূরণ হবে, তা বলা যাচ্ছে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল পৌনে দশটা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ আলোচনা সভা হয়। এ আলোচনা সভায় বলা হয়, যক্ষ্মা জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত রোগ। ১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ বিশ্বে প্রথম যক্ষ্মা রোগের জীবাণু ধরা ধরা পড়ে মানুষের শরীরে। যে কারণে প্রতিবছর ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে বহন করলেও মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয় না। তবে বাহক থেকে ছড়ানো জীবাণু দ্বারাও অন্য মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।